নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজ শ্যালক মিলন হাওলাদারকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রথমে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকে হত্যা করে আগুনে পুড়ে মারা গেছে বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। গত ২৩ মার্চ সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চরপানিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মিলন হাওলাদার শরীয়তপুর জেলার নড়ীয়া থানার চান্দনী গ্রামের মৃত রুস্তম হাওলাদারের ছেলে। এ নিয়ে সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৩শে মার্চ ভোর রাতে মিলন হাওলাদারকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে তারই ভগ্নিপতি মো. বিল্লাল এবং ভাগিনা দিদার। কিন্তু মিলন হাওলাদার বিষয়টি বুঝতে পেরে বাড়ি থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। প্রাণে বাঁচার জন্য দৌড়াতে দৌড়াতে শেষ পর্যন্ত পার্শ^বর্তী কেরানীগঞ্জের মির্জাপুর এলাকার সরকারি পশু ডাক্তার শ্রী কৃষ্ণের বাড়ির নিকটবর্তী একটি পুকুরে ঝাপ দেয়। এসময় তার পিছনে দৌড়ে আসা ভাগিনা দিদারও পুকুরে ঝাপ দেয়। পুকুরে নেমে মামা মিলনকে ধরতে গেলে দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এসময় ওই পুকুরের মালিক শ্রী কৃষ্ণ টের পেয়ে তাদেরকে চোর সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভাগিনা দিদার জানায়, তার মামা অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব কিন্ত সে যেতে যাচ্ছেনা। তাই তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছি। পরে ওই বাড়ির মালিক শ্রী কৃষ্ণ এবং পাঠাও চালক মোঃ লিটনসহ স্থানীয় রোহি দাস মিলে একটি সিএনজি ভাড়া করে দেয় হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য। এদিকে এলাকাতে খবর আসে সকাল ৬টায় মিলন আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে। তার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুকুরের মালিক সরকারি পশু ডাক্তার শ্রী কৃষ্ণ বলেন, আমরা যখন মিলন হাওলাদারকে পুকুর থেকে তুলে রাস্তায় অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসি তখন সময় ভোর আনুমানিক ৬টা বা সাড়ে ৬টা হবে। রাস্তায় তেমন যানবাহন চলাচল নেই পাঠাও চালক মোঃ লিটন ঘটনাস্থলে আসলেই ভাগিনা দিদারের সঙ্গে কথা বলে একটি সিএনজিতে উঠিয়ে দেই। তাহলে ভোর ৬টার সে মারা গেলো কিভাবে?
পাঠাও চালক মোঃ লিটন জানায়, আমরা মিলনকে যখন সিএনজিতে উঠিয়ে দেই তখন ভাগিনা দিদার ও মিলনের সমস্ত শরীর কাদামাখা ও ভেজা ছিল এবং মিলনের টিশার্টের বুকের কাছে আগুনে পুড়ার ছোট একটি ছিদ্র ছিলো। এছাড়া শরীরে কোনপ্রকার আগুনে দগ্ধ হওয়ার লেশমাত্র চিহ্ন ছিলোনা। এ ঘটনায় গত ২৪শে মার্চ মিলনের বোন রেনু বেগম ২০ জনকে আসামী করে সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির জরুরী হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে গত ৩১শে মার্চ রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চরপানিয়া গ্রামের মধ্যে বিল্লাল মাতবর এবং ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন এই-দুই গ্রুপের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে একাধিকবার টেঁটাযুদ্ধও হয়েছে। এ বিষয়ে ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফারুক হোসেন জানান, হত্যা মামলাটি সম্পূর্ণই সাজানো। আমাদের প্রতিপক্ষরা মিলনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেও যখন মারতে পারেনি, তখন মিলনকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে রাস্তায় মেরে ফেলেছে। বিল্লাল এবং তার ছেলেকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। সিরাজদিখান থানার ওসি তদন্ত মো. কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আশা করছি, খুব শীঘ্রই এর রহস্য উদঘাটন হবে।