নিজস্ব প্রতিবেদক
সিরাজদিখানের মালখানগর ইউনিয়নের ফেগুনাসার গ্রামে প্রাচীন শিব মন্দির সংলগ্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণ ও বাঁশের বেড়া দেওয়ায় এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই জায়গার ক্রয়কৃত দাবিদার জহিরুল ইসলামের সাথে মন্দির কমিটির সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছে। বিরোধীয় সম্পত্তি নিয়ে আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে।
গত দুইদিন আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সাইনবোর্ড লাগিয়ে গাছের চারা রোপণ করেছে মো. জহিরুল হকের পরিবারের লোকজন। মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। এর আগে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিরোধীয় সম্পত্তিতে মন্দির সংলগ্ন একচালা ঘর তুলে কোরআন শরীফ পড়েন জহিরুল ইসলামের মেয়ে সুইটি। বিষয়টি অসুন্দর দেখায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি পুলিশ সুপার শৃঙ্খলা রক্ষায় তখন সমাধান করেন। গাছ লাগানো বিষয়টি নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উভয়পক্ষকে তার অফিসে ডেকেছেন।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল রায় জানান, সাড়ে ৮ শত বছরের পুরনো মন্দিরের এখন কোন জায়গা নেই। একসময় ২ একর ২ শতাংশ মন্দিরের জায়গা ছিলো, এখন সেই জায়গার মালিক বিভিন্নজন হয়েছে। মন্দিরের জায়গার মালিক হয়েছেন জহিরুল ইসলাম, তাই আমরা আদালতে মামলা করেছি। মামলা চলমান অবস্থায় মো. জহিরুল হক বেপারীর মেয়ে সুইটি ও বিউটিসহ লোকজন নিয়ে মন্দির ঘেঁষে বেড়া দিয়েছে। ৭ মার্চ মন্দিরের পাশে রাতের অন্ধকারে একটা ছোট ঘর তুলেছে এবং তার বাড়িতে সুন্দর পরিবেশে পবিত্র কোরআন না পড়ে, মন্দিরের পাশে এসে কোরআন পড়ে। আমরা উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনও এবং থানায় জানাই। এরপর গত ১৭ তারিখ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেই জায়গায় গাছ লাগানো শুরু করে। এতো আগের মন্দিরের জায়গা যদি আদালতের মাধ্যমে তারা পায়, তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আমরা মন্দিরের অনুষ্ঠানে রান্না-বান্নার কাজে যে জায়গা ব্যবহার করি তা তারা নানা অজুহাতে দখলের চেষ্টা করে। বারবার ঝামেলার সৃষ্টি করছে তারা।
মো. জহিরুল হক বেপারীর মেয়ে সুইটি জানান, আমার বাবা ৩৫ বছর আগে জমি কিনে এখানে বাড়ি করেছে, আমরা বসবাস করছি। এত বছরে কেউ দাবিদার নাই, গত ৬/৭ বছর যাবৎ মন্দির কমিটি ঝামেলা করে মামলা দিয়েছে। এখানে মন্দিরের কোন জায়গা নাই। তাদের যন্ত্রণায় আমার বাবা এখন অসুস্থ হয়ে বিছানায়। যাদের নিকট থেকে জমি কেনা হয়েছে, তাদের সিএস-এসএ সব ঠিক আছে দেখেইে কিনেছে আমার বাবা। শান্তির লক্ষ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের কথায় ১১ শতাংশ জায়গা আমরা আগেই মন্দিরের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। এখন আরো ৫ শতাংশের মতো ছাড়া আছে। তারপরও তাদের হয়না। আমরা নানাভাবে নির্যাতিত, মন্দিরের নাম দিয়ে কমিটি সুবিধা খোঁজে। নেতারাও তাদের পক্ষে। মন্দিরের অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের এই জায়গায় কিছুদিন আগে প্রশাসন অনুরোধ করে খালি করেছে, সুযোগে মন্দিরের লোকজন আমাদের অনেকগুলো বড় গাছসহ চারাগাছ কেটে ফেলেছে। এখন অনুষ্ঠান শেষ আমাদের জায়গায় বেড়া দিয়েছি। আমার জায়গায় আমি গাছ লাগিয়েছি, তাদের সমস্যা কি। তাদের কারণে আমরা কি অত্যাচারে আছি সেটা কেউ দেখে না।
সিরাজদিখান থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন জানান, বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান। আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বারবার গিয়ে উভয়কে বলে এসেছি মামলা চলাকালীন যে যেভাবে আছেন সেভাবে থাকবেন। যার পক্ষে রায় আসবে সেই পাবেন। অযথা কোন ঝামেলা কেউ বাঁধালে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কয়েকদিন আগে সার্কেল স্যার সরেজমিনে উভয়ের সাথে কথা বলেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফুল আলম তানভীর বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। এ বিষয়ে সব শুনেছি। এডিসি স্যারের সাথে কথা বলেছি, তিনিও আগে থেকে জানেন। বিষয়টি আদালতের, এখানে আমরা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। বর্তমান পরিস্থিতির উপর দেখতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে বলা হয়েছে।