নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধপূর্ণ সম্পত্তিতে ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ফেগুনাসার গ্রামে অবস্থিত শ্রী শ্রী শিব মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল রায় মন্দির কমিটির পক্ষে তাদের দাবীকৃত ২০২ শতাংশ সম্পত্তির দলিল বাতিলের মামলা চলমান থাকাবস্থায় মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বে ওই সম্পত্তিতে ঘর ও বেড়া নির্মাণের অভিযোগ করেন মামলায় বর্ণিত ১৭নং বিবাদী অভিযুক্ত ফেগুনাসার গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জহিরুল হক বেপারীর বিরুদ্ধে। এর আগে বেশ কয়েকবার উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মহিউদ্দিন আহমেদ এর উপস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন বিরোধপূর্ণ সম্পত্তির মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু মন্দির কমিটির লোকজন নিষেধাজ্ঞা মানলেও মোঃ জহিরুল হক বেপারী তা মানছেন না। বিরোধপূর্ণ সম্পত্তিতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যাতে কেউ উক্ত সম্পত্তিতে প্রবেশসহ কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য মন্দির কমিটির লোকজন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
স্থানীয় ও মন্দির কমিটির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে এডভোকেট অজয় চক্রবর্তীকে সভাপতি এবং অনিল রায়কে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট শ্রী শ্রী মন্দিরের কমিটি গঠনপূর্বক মন্দিরের দায়িত্বভার তাদের উপর ন্যস্ত করা হয়। একই বছর মোঃ জহিরুল হক বেপারী ৩৯৭৬ ও ৩৯৭৭নং দুইটি দলিল মূলে ৪৩ ও ৪৫ দাগের ২০২ শতাংশ সম্পত্তির মালিকানা নিজের বলে দাবী করে ওই সম্পত্তির দখল মন্দির কমিটিকে ছেড়ে দিতে বলেন। পরে তারা মুন্সীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডরুমে তল্লাশী দিয়ে জানতে পারেন, ১৯৬২ সালে ২০২ শতাংশ সম্পত্তি ৬৪৯, ৬৫০, ৬৫১, ৬২, ৬৫৩, ৬৫৪, ৫৫, ৫৬, ৬৫৭, ৬৫৮ নং ১০টি জাল দলিল সৃজন করে ডলি রানী শর্মা ও শ্রী অখিল চন্দ্র শর্মা নামে দুই ব্যক্তি ৩৯৭৬, ৩৯৭৭নং দলিল মূলে ১০১ শতাংশ সম্পত্তি মোঃ জহিরুল হক বেপারীর কাছে ১৯৯৩ সালে হস্তান্তর করেন। এরপর থেকে ৩৯৭৬, ৩৯৭৭নং এ দুইটি জাল দলিল বলে মোঃ জহিরুল হক বেপারী ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবী করে আসছেন। এরপর ২০২০ সালে শ্রী শ্রী মন্দির কমিটির সভাপতি এডভোকেট অজয় চক্রবর্তী মন্দির কমিটির পক্ষে বাদী হয়ে ফেগুনাসার মৌজাস্থিত আরএস ৪৩ ও ৪৪নং দাগের মোট ২০২ শতাংশ সম্পত্তি মন্দির কমিটির সম্পত্তি দাবী করে মুন্সীগঞ্জ মোকাম-যুগ্ন জেলা জজ ২য় আদালতে ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ ২৫ জনকে বিবাদী করে দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। যার নং-১৩৮/২০২০। মামলা দায়েরের পর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ওই সম্পত্তির ভোগ দখলে থাকা মোঃ জহিরুল হক বেপারীকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধীয় সম্পত্তিতে ঘরবাড়ি ও বেড়া নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু তিনি প্রশাসনের কোনপ্রকার তোয়াক্কা না করে বিরোধপূর্ণ সম্পত্তিতে টিনের ঘর নির্মাণসহ সম্পত্তির চারপাশে বাঁশের বেড়া নির্মাণ এবং সম্পত্তিতে সাইনবোর্ড সাটিয়েছেন। এতে করে আইন ও প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাদের অসম্মান ও অবমাননা করা হয়েছে।
শ্রী শ্রী শিব মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল রায় বলেন, এই সম্পত্তি মন্দিরের। কিন্তু তারা অবৈধভাবে তার নিজের বলে দাবী করছেন। আমরা তাদের জাল দলিল বাতিলের জন্য কোর্টে মামলা করেছি। প্রশাসনের লোকজন এসে কয়েকবার সম্পত্তিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করে গেলেও তারা মানছেন না। আমরা মামলার রায় যা হয় তা মানতে রাজি আছি। তবে মামলার রায়ের আগে তারা যেন সম্পত্তিতে ঘর ও বেড়া দিতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোঃ জহিরুল হক বেপারীর পক্ষে তার মেয়ে জহুরা বেগম বলেন, এই সম্পত্তি আমাদের। তারা যতোই দাবী করুক না কেন কাগজের বাইরে তারা যেতে পারবে না। আমাদের কাগজপত্র সম্পূর্ণ সঠিক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। মন্দির কমিটির লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি নিজে গিয়ে গাছপালা কেটে দিয়ে আসছি। মামলা চলমান থাকাবস্থায় রায় না আসা পর্যন্ত কেউ সেখানে ঘর তৈরি করতে পারে না।
সিরাজদিখানে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধপূর্ণ সম্পত্তিতে ঘর নির্মাণের অভিযোগ
আগের পোস্ট