নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেওয়ায় মসজিদ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে চিহ্নিত মাদক কারবারিরা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের মালখানগর গ্রামে।
জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের ৯ তারিখে ‘মালখানগর মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ স্থান’ শিরোনামে দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ ও স্থানীয় আরেকটি পত্রিকায় এমনি আরো একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী মাদক নির্মূলে সোচ্চার হয়। কারণ এ ইউনিয়নে মাদকের আস্তানা প্রায় অর্ধশত। এর মধ্যে মাদকপাড়া হিসেবে মালখানগর চৌরাস্তা শীর্ষে। এখানে কয়েকটি পরিবার পাশাপাশি মাদক আস্তানা গড়ে তুলেছে। তাদের খুচরা বিক্রেতা রয়েছে শতাধিক। পরে মসজিদ কমিটি, পঞ্চায়েত ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জুম্মার নামাজ শেষে মিটিং করে শীর্ষ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মালখানগর গ্রামের সুমন, মনির, ভাগিনা সুমন, জুয়েল, মো. ময়না ও সোহাগসহ আরো মাদক ব্যবসায়ীদের সাবধান করেন যাতে তারা আর মাদক ব্যবসা না করে। পরবর্তীতে তারা রমজান মাসেও দেদারছে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যায়। কিছুদিন পর জুম্মার নামাজ শেষে মাদক কারবারিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ তাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত জানায়, তোমরা মাদক ব্যবসা করলে এ এলাকায় থাকতে পারবা না। সেসময় সুমনের বাড়ির মাদক সেবনের একটি একচালা ও মনিরের বাড়ির মাদক সেবনের একটি একচালা ঘর আংশিক ভেঙ্গে দেয় এলাকাবাসী। এর আগে ও পরে পুলিশ এ এলাকায় একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ১০/১২ জন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছে। তাছাড়া সুমনের স্ত্রী, মনিরের স্ত্রী ও মো. ময়নার স্ত্রীকে পুলিশ মাদকসহ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। এসকল মাদক ব্যবসায়ীদের নামে ৮/১০টি করে মাদক মামলা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে মনিরের বিরুদ্ধে ১৬টি এবং অত্র অঞ্চলের মাদক সম্রাট সুমনের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৪টির মত। গত ৩ সপ্তাহ আগেও সুমনকে বেতকা থেকে মাদকসহ পুলিশ গ্রেফতার করে এবং মনিরকে কাকালদী পাওয়ার হাউজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। তারা ১০/১২ দিন করে জেল খেটে এসে আবার মাদক ব্যবসা চালু করে। তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের স্ত্রী, ভাই ও ছেলেমেয়েরা এই ব্যবসা পরিচালনা করে। বর্তমানে তারা এই গ্রামে লুকিয়ে ব্যবসা করে এবং মালপদিয়া স্কুল রোড, নাটেশ্বর নদীর পাড়, পূর্বকাকালদী তিন রাস্তার মোড়, কাকালদী পাওয়ার হাউজ, কাজীরবাগ ঠাকুর বাড়ী বালুর মাঠ, রথবাড়ি বটতলা-গোড়াপীপাড়া সড়কে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারাসহ একাধিক বিক্রেতারা। তাদের শতাধিক সহযোগী ও খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছে।
এ বিষয়ে মালখানগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য হযরত আলী জানান, তারা অবৈধ ব্যবসা করে মাদক খায় ও বিক্রি করে। অত্র অঞ্চলের মাদকের বড় ডিলার তারা। কয়েকটি উপজেলার মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতারা এই মনির ও সুমনদের নিকট থেকে মাদক ক্রয় করে। তাদের কত বড় দুঃসাহস, সমাজের গণ্যমান্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা করে এসেই আবার মাদক ব্যবসা শুরু করেছে। সমাজের লোকজন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সমাজের লোকজন কোন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে ছাড় দিবে না। এ এলাকায় কোন মাদক কারবারী থাকতে পারবে না। আমরা সকলে মিলে পুলিশকে সহযোগিতা করছি। প্রায়ই কোন না কোন মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতা পুলিশের হাতে ধরা পরছে।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ জানান, প্রকাশ্যে এতগুলো পরিবার এ সভ্য সমাজে যেভাবে মাদক বিক্রির হাট বসিয়েছে, এভাবে সমাজ সুস্থ থাকতে পারে না। আগামী প্রজন্মকে তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সমাজ থেকে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছি, তোমরা মাদক ব্যবসা করতে পারবা না। ভালো ব্যবসায় ফিরে এসো, না হয় সমাজ থেকে চলে যাও। তারা সমাজের কাছে বলে নাই আমরা ভালো হবো, এই সমাজে থাকবো। তারা বাড়ি থেকে সরে আশপাশে গিয়ে ব্যবসা করছে। আবার বাড়ি এসে সুযোগ পেলে ব্যবসা করছে। পুলিশও তাদের ধরে জেলে পাঠায়, আবার ২/৪ দিন পর চলে আসে। আমরা তাদের মারধর করিনাই, বাড়ি-ঘর ভাঙ্গিনাই, শুধু মাদক ব্যবসায়ে বাঁধা দিয়েছি। এজন্য তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্থানীয় মুরব্বী আলী ইসলাম মাদবর জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের মিথ্যা মামলায় আমরা ভয় পাই না। আমরা আরো কঠোর হবো। আমাদের সমাজের বিরুদ্ধে তারা দাঁড়িয়েছে। তারা অন্যায় কাজ করছে। সমাজের ভালো মানুষগুলোর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আমরা আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর বিজ্ঞ আদালত পর্যালোচনা করে তাদের মামলা খারিজ করে দিচ্ছে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-মসজিদ-মন্দির কমিটির লোকজন এই মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এই মালখানগর ইউনিয়নে কতগুলো মাদক ব্যবসায়ী আছে পুলিশ ও এলাকার সকলের জানা আছে। মাদকের সাথে যারা জড়িত তারা সমাজের শত্রু। পুলিশ ধরলে সাক্ষীর অভাবে তারা আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যায়। এখন মানুষ প্রতিবাদী হয়েছে। যাদের সামনে মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ ধরবে এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা আইনের হাত থেকে আর রক্ষা পাবে না।
মাদক ব্যবসায়ী মনিরের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ভাই ও তার পরিবার মাদক ব্যবসা করে। সমাজ থেকে বাঁধা দেওয়ার পর তারা ব্যবসা বন্ধ করেছে। এখন যদি আবার তারা ব্যবসা করে আমি বাঁধা দেব। যদি না শুনে তাহলে সমাজের লোকজন নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী যে মামলা করেছে তা আদালত খারিজ করে দিয়েছে। আমি ভুল করেছি সমাজের কয়েকজনের নামে মামলা দিয়ে, মামলা তুলে নিব। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। সমাজের সকলের কাছে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর ক্ষমা চেয়েছি। সমাজের সকলের সাথে আমি আছি। আমাকে মালখানগর চৌরাস্তায় যেন মাছ বিক্রয় করার সুযোগ দেওয়া হয়।