নিজস্ব প্রতিবেদক
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। প্রত্যেক শিশুর মধ্যে ভবিষ্যৎ দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতিভা সুপ্ত রয়েছে। এ সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন হলে প্রতিটি শিশু জাতির কর্ণধারের ভূমিকা পালন করতে পারে। শিশুরাই প্রত্যেক পরিবার, সমাজ ও জাতির ভবিষ্যৎ। জাতি আশা করে, আজকের শিশু সার্বিক গুণে গুণান্বিত দেশের আদর্শ নাগরিক হবে। প্রতিটি শিশুর মধ্যে নিহত আছে বিপুল সম্ভাবনা। আর এই শিশু-কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে ধূমপানের সাথে। মুন্সীগঞ্জের নামিদামি স্কুলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাস্তায় বেড়ে ওঠা শিশুরাও ঝুঁকছে ধূমপানের দিকে। ধীরে ধীরে তারাই জড়িয়ে পড়ছে নেশার জগতে। নতুন ক্রেতা পেতে সুপরিকল্পিতভাবে জাল পাতছে মাদক ব্যবসায়ীরা। আর মাদকের সেই জালে সবার আগে আটকে যাচ্ছে শিশু-কিশোররাই।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার শ্রীনগর পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ এর পশ্চিম পাশে চারজন শিক্ষার্থীদের একটি জটলা চোখে পড়ল। তারা যেন কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। একটু এগিয়ে দেখলাম, শিক্ষার্থীরা একটি সিগারেট জ্বালানোর চেষ্টা করছে। কথা বললাম ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া অনিকের সঙ্গে। জানতে চাইলাম তার কাছে, এইসব খেয়ে কি লাভ? তোমরা তো এখনো অনেক ছোট! অনিককে করা প্রশ্নের উত্তর দিলো পাশ থেকে রাজিব। আপু স্মার্ট হতে হলে এগুলো খেতে হয়, বলতে পারেন এটা স্টাইল বা ফ্যাশন। কথাটা শুনে আমি একটু আঁতকে উঠলাম।
কিছুক্ষণ পরে কথা হল অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া নাজমুলের সাথে তিনি বললেন- ধূমপান খারাপ কিছু না। আমার বাবা, মামা ধূমপান করে। খারাপ হলে তো তারা ধূমপান করত না। অষ্টম শ্রেণীর আদনান জানালেন- এগুলো আবার নেশা কিসের। আমরা তো নেশা করি না। তাছাড়া জীবনে সব অভিজ্ঞতা রাখার দরকার আছে। একই ক্লাসে পড়া আকাশ একটু ভিন্ন সুরে বললেন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডায় এলে খাই। এছাড়া আমি খাইনা। বন্ধু-বান্ধব খায় তাই আমিও চেষ্টা করি। বন্ধু-বান্ধব ছাড়া তো আর চলা যায় না। শ্রীনগর সরকারি কলেজে যেতে ভাগ্যকুল রোডে চায়ের দোকানের পিছনে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে করছে ধূমপান। স্কুলের সামনে গড়ে ওঠা দোকানদাররা চাওয়া মাত্র শিক্ষার্থীদের কাছে সিগারেট বিক্রি করছে। শ্রীনগর পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের এখানে সিগারেট বিক্রি চোখে পড়ার মতো। জানতে চাইলাম সিগারেট বিক্রেতা একজনের কাছে, আপনি কেন এই ১১/১২ বছরের ছেলেদের কাছে সিগারেট বিক্রি করছেন? তিনি বলেন, সবাই করে তাই আমিও করছি।
কয়েকজন অভিভাবকের সাথে এই বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, বর্তমানে শিশুদের খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। নেই সুস্থ বিনোদনের সুযোগ। কিন্তু পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিনোদন তো প্রয়োজন। মা বাবাকে আরো সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে সন্তানদের প্রতি। সরকারের উচিত কঠিন আইন করা দোকানদাররা যাতে স্কুলের ছাত্রদের কাছে সিগারেট বিক্রি না করে এবং স্কুল কলেজের সামনে কোন দোকানদার যেন সিগারেট না রাখে।