নিজস্ব প্রতিবেদক
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। আর তার সাথে সাথে বিপন্নের পথে জলাভূমির ফল ‘ঢ্যাপ’। বহুমুখী কারণে জেলার সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক জলসম্পদে ভরপুর আড়িয়ল বিল দিন দিন হারিয়ে ফেলছে তার চিরচেনা রূপ আর গৌরবময় ঐতিহ্য। পাশাপাশি বিলটি হারাতে বসেছে তার জীববৈচিত্র্য। মুন্সীগঞ্জের বিল-নদীতে ফোটে ওষধি গুণে সমৃদ্ধ নানা প্রজাতির শাপলা ফুল ও গুল্ম লতা। শাপলা ফুল দেখে মুগ্ধ হন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু কালের বিবর্তনে হাওর-বাওড়, খাল, বিল ও জলাশয় শুকিয়ে হারিয়ে যেতে বসছে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। তার সাথে সাথে বিপন্নের পথে জলাভূমির ফল ঢ্যাপ। শাপলার ফলকেই ‘ঢ্যাপ’ বলা হয়। মাঝে-মধ্যে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গ্রামের বাজারগুলোতে ঢ্যাপ বিক্রি করতে দেখা যেতো। জানা গেছে, শাপলা সাধারণত বদ্ধ অগভীর জলাশয়, হাওর-বাওড়, ডোবা, খাল-বিল অঞ্চলে জন্মে থাকে। দুই ধরনের শাপলা ফুল দেখা যায়, সাদা ও লাল। তবে মুন্সীগঞ্জে লাল শাপলা দেখা যায়না। স্থানীয় ভাষায় সাদা শাপলার ফলকে সাদা জলফল ও লাল শাপলাকে লাল বা রক্ত জলফল বলা হয়। এ শাপলা ফুল যখন আবদ্ধ জলাশয়ে একসঙ্গে অনেকগুলো ফুটে থাকে তখন ওই জলাশয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। আর এ ফুল যখন ফলে রূপান্তরিত হয় তাকে স্থানীয় ভাষায় ঢ্যাপ বলা হয়। এ ঢ্যাপের ভেতরে অনেক ছোট ছোট বীজ থাকে। এগুলো মানুষ উঠিয়ে নিয়ে ভেঙ্গে রোদে শুকিয়ে খই ভেজে থাকে। এ খই খুবই সুস্বাদু হয়। এ শাপলা বর্ষার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে জন্মে ও ফুল ফুটে থাকে। বর্তমানে এ খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে ইরি-বোরো, আউশ, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, আলু, গমসহ বিভিন্ন জাতের রবিশস্য চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া আবদ্ধ জলাশয়গুলোতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় এ শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একসময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ শাপলা ফুলের ডাঁটার তরকারি হিসেবে খেতেন। শুধু তা-ই নয়, এই ঢ্যাপ আমাশয়, বদহজম এবং রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য বেশ কার্যকরী বলেও প্রচলিত রয়েছে গ্রামে। শাপলার ফল বা ঢ্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে ‘ঢ্যাপের খই’ নামে পরিচিত। এই ঢ্যাপের মধ্যে অসংখ্য বীজদানা থাকে। এসব বীজদানা রোদে শুকিয়ে চাল তৈরি করা হয়। ঢ্যাপের পুষ্টিকর চাল থেকে তৈরি করা খই ও নাড়ু অত্যন্ত সুস্বাদু। কিন্তু ‘শাপলা ফল’ বা ‘ঢ্যাপ’ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এখন।