নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে যা রূপ নিয়েছে হরতাল-অবরোধে। প্রতিটি হরতাল-অবরোধে ঘটছে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এর মধ্যেও সড়কে নিয়মিত চলছে গণপরিবহন। যেটা অনেকটা ব্যর্থ করে দিয়েছে কর্মসূচি। যদিও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, এ ক্ষতির পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে ৪৮৭টি বাস-ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এই সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় গণপরিবহন ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান কম চলায় পরিবহন খাতে ক্ষতি হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে আবার টানা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি-জামায়াত। এ কর্মসূচি মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এ কর্মসূচি পালন করবে। তবে এ কর্মসূচিতেও ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি ও জামায়াত। ওইদিন এ সমাবেশ কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত (৭ ডিসেম্বর) সারাদেশে ৪ দিন হরতাল ও ২০ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি-জামায়াত।
এই কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় ১০৬টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২১ কোটি ২০ লাখ টাকা। একই সময়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ৫৩টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া ঢাকার বাইরে ৩৩টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সব মিলে ১৯২ বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪২ কোটি ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই সময় ঢাকাসহ সারাদেশে ২৯৫টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে, যার আর্থিকমূল্য পাঁচ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সব মিলে ৪৮৭টি বাসে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতি ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
কীসের ভিত্তিতে এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে, তা জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং ভাঙচুর করা যানবাহনের ক্ষতির পরিমাণ আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরের বাসগুলো যেহেতু বড়, সেজন্য সেগুলো আগুনে পুড়লে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি ধরা হয়েছে। আর ঢাকা শহরে ছোট বাস চলাচল করায় এগুলো পুড়লে ২০ লাখ টাকা ক্ষতি ধরা হয়। এছাড়া ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান ভাঙচুর করলে ক্ষতি ধরা হয় পাঁচ লাখ টাকা। আর বাস ভাঙা হলে দুই লাখ টাকা ক্ষতি ধরে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ চলাকালে প্রতিদিনই আগুনে পুড়ে যাওয়া বাসের কাগজপত্র নিয়ে সমিতির কার্যালয়ে আসছেন মালিকরা। তখন তাদের কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। কোনো কাগজ কম থাকলে তাদের ক্ষতিপূরণের আবেদন গ্রহণ করা হয় না।’ তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের সময়ও এভাবে গণহারে গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছিল। তখন নির্বাচনের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। এবার নির্বাচনের পরেও এমন একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চাওয়া হবে আর্থিক সহযোগিতা।
২৫ দিনের হরতাল-অবরোধে গণপরিবহন খাতে ক্ষতি ১৭ হাজার কোটি
আগের পোস্ট