নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলায় কারাগারে থাকা সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারি শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার দুপুর দেড়টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। ১৯ দিন কারাবাসের পর জামিন পেলেন জেলা সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারি শিক্ষক হৃদয় মন্ডল। মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোতাহারাত আক্তার ভূইয়ার আদালতে জামিন শুনানী হয়। এতে বাদী বিবাদী পক্ষের আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। শুনানী শেষে বিচারক ৫ হাজার টাকা বন্ডে শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিন মঞ্জুর করেন। শিক্ষকের নিযুক্ত আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহিন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ জামিনের তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে গেলো ২২ মার্চ ঐ শিক্ষককে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা মামলায় আটক করে মুন্সীগঞ্জ থানা পুলিশ। ওইদিন রাতে বিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিশিয়ান মো. আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরেরদিন ২৩ মার্চ পুলিশ ওই শিক্ষককে আদালতে প্রেরণ করে। ওইদিন আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। এছাড়া গেলো ৪ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শিক্ষকের জামিন আবেদন করা হয়। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে গতকাল রবিবার এপ্রিল শুনানীর দিন ধার্য করে।
উল্লেখ্য, গেলো ২০ মার্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্রের শ্রেণী শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল দশম শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস নিচ্ছিলেন। ওই ক্লাসে শিক্ষক বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় শিক্ষকের কথাবার্তা ঘিরে নানা রকম প্রশ্ন করেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। শিক্ষকও প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় তিনি ধর্মকে বিশ^াস এবং বিজ্ঞানকে প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কথাবার্তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন। পরে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়। পরেরদিন ২১ মার্চ শিক্ষার্থীরা আপত্তিজনক কথাবার্তার অভিযোগ এনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন গণিত বিষয়ের ওই শিক্ষককে ৩ দিনের মধ্যে জবাব চেয়ে শোকজ করেন। শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য বেঁধে দেওয়ার সময় না পেরুতেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে শিক্ষকের অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ওই দিন আধাবেলা পর্যন্ত বিদ্যালয় চত্বরে ও পার্শ্ববর্তী রিকাবীবাজার এলাকায় মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা। এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষক শিক্ষক আলাউদ্দিন সদর থানায় ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনা অবহিত করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুজামান আনিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ-উল-ইসলাম। এসময় পুলিশ শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে সদর থানা হেফাজতে নিয়ে আসেন। এতে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা প্রশমিত হয়। এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, টিউশনিতে হুদয় মন্ডলের শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশী হওয়ায় অন্য শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করতেন না। এসব কারণে এ ঘটনার মাস দেড়েক আগে আরো দুইবার হুদয় মন্ডলের উপর হামলা হয়। এসব তথ্য জানান হৃদয় মন্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্রের শ্রেণী শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে ঐ ক্লাসে পাঠানো হয়। তিনি ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা করার সময় তার বক্তব্যকে মোবাইলে রেকর্ড করে ঐ স্কুলের দশম শ্রেনীর কমার্সের ছাত্র জুনায়েদ। রেকর্ডে কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। তখন হৃদয় মন্ডল ধর্মকে বিশ^াস এবং বিজ্ঞানকে প্রমাণ ভিত্তিক জ্ঞান হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদের নির্দেশে বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান আসাদ বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ থানায় বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয়ের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলাটি করেন। মামলার পর থেকে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের গ্রেফতার, মামলা এবং জামিন না পাওয়া নিয়ে সরব ছিলো সোশ্যাল মিডিয়া। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবীতে বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দেয়।
মুন্সীগঞ্জের আলোচিত শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিন মঞ্জুর
আগের পোস্ট