নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে মাদকের ব্যবসা, জুয়া খেলা এবং ঘাটে আসা দর্শনার্থীদের হয়রানির প্রতিবাদ করায় দৈনিক সমকালের লৌহজং প্রতিনিধি ও লৌহজং প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান ঝিলুর উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পদ্মা সেতু উত্তর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটের ৩ নম্বর লঞ্চঘাটের যাত্রী ছাউনিতে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক ঝিলুর ক্যামেরা কেড়ে নেয় এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসী সুমন মাদবর ও শামীম মাদবর দলবল নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ঝিলুকে লঞ্চঘাটের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে এবং বলতে থাকে ওকে (ঝিলু) আজ মেরে লঞ্চ থেকে ওর লাশ নদীতে ফেলে দিব। এসময় ঝিলুর আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
সাংবাদিক ঝিলু জানান, তাকে হামলার আগে সুমন মাদবর ও শামীম মাদবরের নেতৃত্বে ঘাটের যাত্রী ছাউনিতে জুয়া খেলা চলছিল। জুয়া খেলার ছবি তোলায় সুমন-শামীমসহ ৮/১০ জন দলবদ্ধভাবে তার উপর হামলা চালায়। ঝিলুর উপর হামলায় নেতৃত্বদানকারী সুমন মাদবর ও শামীম মাদবর কুমারভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা মতি মাদবরের ছেলে।
সমকাল প্রতিনিধি ঝিলুর উপর হামলার ঘটনায় মুসীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তুহিন, সাবেক সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল, বিক্রমপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মাসুদ খান, সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইদুর রহমান টুটুল, প্রবীণ সাংবাদিক অলক কুমার মিত্র, নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ সেক্রেটারি সমিতির (বাপসা) সভাপতি এইচ এম রেজাউল করিম তুহিন, লৌহজং প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত হোসেন নিন্দা প্রকাশ করেছেন এবং অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, ঘাট নিরিবিলি থাকার সুযোগে মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, নেশাখোর এবং জুয়াড়িদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানায়, এই সুমন এলাকার একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বালু ড্রেজার ব্যবসায়ী মতি মাতবরের ছেলে। পদ্মা নদীর বালু উত্তোলনের ড্রেজারগুলো সুমনের বাবা মতি মাতবরের নেতৃত্বে চলে এবং ঘাট এলাকার দর্শনার্থীদের হয়রানি, ছিনতাই, জুয়া ও মাদক ব্যবসাগুলো তার ছেলে সুমনের নেতৃত্বে চলে। তাদের হাত উপর মহল পর্যন্ত। তাই তাদের এসব কাজে যে বাঁধা দিবে সেই বিপদে পড়বে। এছাড়া যে থানা পুলিশ করতে যাবে তার বিপদ আরও বাড়বে।
এমন মন্তব্যের বিষয়টি রহস্যজনক মনে হওয়ায় এলাকায় অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, হামলাকারীরা ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দাপটের সাথে অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিভিন্ন অপরাধ ও অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনসহ নেতৃত্ব স্থানীয় পর্যায়ের সকলেই তাদের অবৈধ আয়ের উৎসের ভাগ পায় বলে তাদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগই ধামাচাপা পড়ে যায়। যার ফলে তারা অপরাধ করে ও বহাল তবিয়তে দাপটের সহিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার সাধারণ জনগণ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায় না। তাদের নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলো তাদের ভয়-ভীতি ও হুমকির কারণে, প্রাণনাশের ভয়ে থানায় অভিযোগ ও মামলা করতে সাহস পায় না। এছাড়া প্রশাসনের আগ্রহ ও সহযোগী মনোভাব না থাকায় এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ না নিলে অপরাধীরা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে উৎসাহিত হবে বলে সাধারণ জনগণ মতামত ব্যক্ত করেন।
এলাকাবাসী বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধী শনাক্তের জন্য পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।