নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সরকারী কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখলে নিয়ে পাকা দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার পাটাভোগ ইউনিয়নের জুশুরগাঁও এলাকায় শ্রীনগর-দোহার সড়ক ঘেঁষা এ জায়গার অবস্থান।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মমিন আলী প্রভাব খাটিয়ে ও বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে এ দখল কাজ করেছেন।
মুন্সীগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শ্রীনগর-দোহার সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে কুশুরীপাড়া মৌজার ২নং খতিয়ানভুক্ত আরএস ৪১,৬৭-৭১,৯১,১৩৭-১৪০, ১৯০,১৯১ ও ২১০ মোট ১৪টি দাগে ১২.২৫ একর সম্পত্তি কাগজে-কলমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের। এর মধ্যে ৪১ দাগে এক একর ১০ শতাংশের একটি জলাশয়ও ছিল তাদের। তবে গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু ভরাট করে পাকা দোকান নির্মাণ করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীনগর-দোহার সড়কের উত্তর পাশে কলেজ গেইট এলাকায় গণপূর্তের জায়গায় ৫-৬টি নতুন টিনশেড দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। দোকানের পেছনের অংশ বালু ভরাট করে রাখা হয়েছে। এসময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ দোকানগুলোর মালিক উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মমিন আলী। মমিন আলী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং মোটা টাকার মালিক। তাই তিনি সবাইকে ম্যানেজ করে এখানে দোকানপাট করেছেন।
এ বিষয়ে মমিন আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানে শুধু আমরা একাই পাকা দোকান নির্মাণ করিনি। সড়কের দু’পাশে এমন শত শত দোকান রয়েছে। তিনি দাবি করেন, যেখানে তিনি দোকান করেছেন এই জায়গাটি তাদের ছিল। তাদের কাছ থেকে সরকার অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু তাদেরকে টাকা দেয়নি। এজন্য তারা আবার এখানে দোকানপাট করেছেন। তিনি এও বলেন, এই জায়গা তিনি লিজ এনেছেন। আপনাদের জায়গা হলে লিজ কেনো আনবেন, এছাড়াও আপনি কোন কার্যালয় থেকে, কবে লিজ এনেছেন? জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কাগজপত্র দেখতে চাইলে বিএনপির এই নেতা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।
স্থানীয়রা বলেন, বিএনপির ক্ষমতা নেই অনেক বছর। এরপরেও বিএনপির এই নেতা সরকারি জায়গা দখল করেছে। এটি জায়গার প্রকৃত মালিক এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করেই তিনি করেছেন। তার মত প্রভাবশালীরা গণপূর্তের রেকর্ডভুক্ত জায়গাটি সম্পূর্ণ দখল করে নিচ্ছে।
কাগজে-কলমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের হলেও এ জায়গাটির বর্তমান মালিকানা তাদের নয় বলে জানান মুন্সীগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খায়রুজ্জামান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইউএনও ও জেলা পরিষদের সঙ্গে বসেছিলাম। তারা জায়গাগুলো জেলা পরিষদের বলেই আমাদের জানিয়েছেন। আমাদের নামে রেকর্ডটি ভুলে রয়েছে। আমরা রেকর্ড সংশোধন করে নিবো।
দোকানপাট করা খতিয়ানভুক্ত জায়গাগুলো জেলা পরিষদের দাবি করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসলাম মোল্লা। তবে জায়গাগুলো লিজ দেওয়া হয়েছে কিনা সেটি তিনি জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্তের এক কর্মচারী বলেন, জায়গাগুলোর প্রকৃত মালিক গণপূর্ত। তবে কর্মকর্তা কোন স্বার্থে জায়গাগুলো অন্যদের বলছেন সেটি তিনিই ভালো বলতে পারবেন।