আবু সাঈদ দেওয়ান সৌরভ : ২৬ বছর পায়ে শিকল পরা অবস্থায় গোসলবিহীন, বস্ত্রহীন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। এতো বছরের মধ্যে কখনোই ৩ বেলা খাবার জুটেনি। ৫ ফিটের চার দেয়ালের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে তার থাকা-খাওয়া, ঘুম, মলত্যাগ। মোট কথা, এই পাঁচ ফিটের মধ্যেই তার জীবন সীমাবদ্ধ। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে মানুষকে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখলে ডাকতে থাকে। কেউ কিছু দিলে খায়, নয়তো না খেয়েই দিন কাটে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়েনর ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন স্থানীয়ভাবে দেলু পাগলা নামে পরিচিত। মানসিক ভারসাম্যহীন মোঃ দেলোয়ার হোসেন প্রায় ২৬ বছর যাবৎ বস্ত্রহীন ও পায়ে শিকল পরা অবস্থায় অকল্পনীয় নোংরা স্থানে মাত্র ৫ ফিট একটি ঘরে খেয়ে না খেয়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে অত্যন্ত কষ্টকর ও অমানবিক জীবনযাপন করছে। দুই সহোদর হকার ও রিক্সাওয়ালা দরিদ্র বিধায় তার চিকিৎসার ব্যয় কিংবা একটা ভাল বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনি। অন্য দুই ভাইয়ের সংসার চালানোই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইয়ের জন্য চিকিৎসা, ভাল বাসস্থান ও তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা বিলাসিতা। প্রায় ২০০০ সাল থেকে মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর থেকেই পায়ে শিকল পরা ও বস্ত্রহীন অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে দেলোয়ার হোসেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে থাকতো। পরে স্থানীয় কিছু লোক চারদিকে ইট দিয়ে দেয়াল ও টিনের চাল করে দেয়। কিছুদিন পরেই ঝড়ে টিনের চাল ভেঙ্গে যায়। তারপর থেকে আবার রোদ আর বৃষ্টিতে ভিজে দিন কাটছে দেলু পাগলার।
স্থানীয়দের ধারণা, দেলু পাগলার সমস্যা অল্প। চিকিৎসা পেলে ভাল হয়ে যেতো। কিন্তু এই দীর্ঘ ২৬ বছরে সরকার কিংবা কোন জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি। কোন সংগঠন কিংবা কোন হৃদয়বান বিত্তশালী ব্যক্তি তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কিংবা তার তিন বেলার খাবারের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসেনি।
রিক্সাচালক ভাই রহমান জানায়, আমরা গরিব মানুষ, নিজেরাই চলতে পারি না। যদি সরকার একটু সহযোগিতা করে আমার ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয় অথবা তার ঘরটা নির্মাণ করে দেয় তাহলে ভাল হয়।
অন্য সহোদর হকার আওলাদ জানায়, হকারি করে খাই। আমার সংসার চালানোই কষ্ট। আমার ভাই দেলোয়ার ২৬ বছর ধরে পাগল। ওরে চালামু ওই সামর্থ্য নাই। সরকার বা দেশবাসী কিংবা সমাজবাসী যদি একটু সহযোগিতা করে তাহলে ভাল হয়।
এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর মুন্সীগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক মোঃ আলাল উদ্দিন জানান, আমি আগামীকালের মধ্যেই আমাদের সমাজসেবা অফিসারকে পাঠাবো। চেষ্টা করবো যাতে তাকে একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনায় আনতে পারি।
সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিংবা সমাজের বিওশালী ব্যক্তিরা দেলোয়ার হোসেনের সাহায্যে এগিয়ে এসে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে -এমনটাই প্রত্যাশা।