নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জের কারাগারের ২০৫ বন্দীর মুক্তির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি এবং লঘু অপরাধে কারাগারে আটক আছেন এমন ২০০ বন্দীসহ মোট ২০৫ বন্দীর মুক্তির প্রস্তাব বিবেচনার জন্য জেলা কারাগার থেকে কারা অধিদপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে। বন্দী মুক্তির প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, কারা অধিদপ্তর থেকে তাঁদের কাছে চারটি শ্রেণির আওতায় মুক্তি দেওয়া যেতে পারে এমন বন্দীর তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই চার শ্রেণিভুক্ত ২০৫ বন্দীর তালিকা কারা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারা বিধির ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী দীর্ঘ মেয়াদী সাজা প্রাপ্তদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ বছর সাজা ভোগ করেছেন এমন পাঁচ বন্দী এবং যারা সর্বোচ্চ ৬ মাস সাজা ভোগ করেছেন ৭২ জন, ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর সাজাপ্রাপ্ত ২৫ জন এবং বিচারাধীন লঘু অপরাধে আটক ১০৩ বন্দীসহ মোট ২০৫ জন বন্দীর মুক্তির বিবেচনার জন্য কারা অধিদপ্তরে সুপারিশ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, দেশের কারাগারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে যারা দীর্ঘমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত, লঘু অপরাধে বিচারাধীন মামলায় কারাগারে আটক এবং অচল বয়স্ক ব্যক্তিসহ চারটি শ্রেণিভুক্ত বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে কারা অধিদপ্তর থেকে তালিকা চেয়ে পাঠানো হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে। পরবর্তীতে ২০৫ জনের তালিকা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের শুরুতে কারা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি কারা বিধির ৫৬৯ ধারায় মুক্তি পেতে পারেন এবং অপর আসামিরা সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেতে পারেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ১২ একর জমির ওপর নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার নির্মাণ করা হয়। কারাগারের সরকারী হিসার অনুযায়ী, বন্দী ধারণ ক্ষমতা ৩০০ জন। বর্তমানে কারাগারে বন্দী আছেন ১৬৯০ জন। এর মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন আটজন। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সহ বিভিন্ন জঙ্গী আছেন (দুই নারীসহ) ১৮ জন। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছাড়াও হাজতী আসামি রয়েছেন। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দীকে গাদাগাদি করে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। মেঝেতে জায়গা না হওয়ায় অনেক বন্দীকে বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, কারাগারে ধারণ ক্ষমতার বেশি বন্দী আছে। করোনাভাইরাস ঝুঁকি মোকাবিলায় কারাগারের ভেতরে ক্লোরিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশ্রিত পানি নিয়মিত ছিটানো হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কারাগারে সরাসরি স্বজনদের সাক্ষাৎ নিরুসাহিত করা হচ্ছে। বন্দীরা যাতে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় না থাকেন, পরিবারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে পারেন, সেলক্ষ্যে ১০টি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। প্রত্যেক বন্দী মুঠোফোনে পাঁচ মিনিট করে কথা বলতে পারছেন।