নিজস্ব প্রতিবেদক
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে মুন্সীগঞ্জে শোকের মাতম চলছে। এ লঞ্চডুবিতে মুন্সীগঞ্জের ১২ জনের মৃত্যুর খবর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তার মধ্যে যমুনা ব্যাংকের স্টাফ রয়েছে ২ জন। একজন নারীসহ এক শিশু এবং একজন ছোট্ট ব্যবসায়ী রয়েছেন এ মৃত্যুর মিছিলে। অনেকেই পরিচয় দিয়ে ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে লাশ মুন্সীগঞ্জে আনতে শুরু করে দিয়েছে। আর মৃত ব্যক্তিদের লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর সেখানে এখন শোকে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এভাবে এতো মৃত্যু মুন্সীগঞ্জবাসী মেনে নিতে পারছে না। এদিকে একজন দুধ ব্যবসায়ীসহ ৮ জন ব্যক্তি এ দূর্ঘটনা থেকে জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। তাদেরকে দেখতে তাদের আত্নীয়স্বজনরা বাড়িতে বাড়িতে ভিড় করছে। বেঁচে বাড়িতে ফিরাতে অনেকেই বাড়িতে বাড়িতে কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করেছেন। এ লঞ্চ দূর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের বেশীরভাগই মুন্সীগঞ্জের বলে শোনা যাচ্ছে। জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে এমএল মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টিঘাট থেকে ছেড়ে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সদরঘাটের কাছেই ফরাশগঞ্জ ঘাট এলাকায় সকাল সোয়া ৯টার দিকে নদীতে লঞ্চটি ডুবে যায়। প্রতিদিনের ঢাকার চাকরিতে এ লঞ্চে যাতায়াত করতেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার গোয়ালঘুন্নী ও কাজিকসবা গ্রামের যমুনা ব্যাংকের দুই স্টাফ। তারা হচ্ছেন গোয়ালঘুন্নী গ্রামের কাঁলাচান তালুকদারের পুত্র সুমন তালুকদার (৩৩)। সে ইসলামপুর যমুনা ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। তার ছোট ভাই মোঃ সোহেল তালুকদার জানান, গতকাল সোমবার সকাল ৭টার দিকে লঞ্চ ধরার জন্য সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। মৃত্যুকালে সুমন স্ত্রীসহ দুই শিশু সন্তান রেখে গেছেন। পৌনে ৬টার দিকে তার মৃতদেহ ঢাকা থেকে বাড়িতে আনা হয়। সেই সময় হাজার মানুষ তাকে একনজর দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় জমায়। রাতে কাজি কসবা কবরস্থানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। কাজি কসবা গ্রামের ঘুঘুবাড়ির রহিম উদ্দিনের পুত্র শাহাদাৎ (৪৪)। সে ঢাকার চকবাজার শাখার যমুনা ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। সেও মৃত্যুকালে স্ত্রীসহ দুই শিশু সন্তান রেখে গেছেন। রামপাল ইউনিয়নের শাখারী বাজার গ্রামে গোলাপ হোসেন ভূইয়া (৫২)। সে ঢাকার লালকুঠি এলাকায় ব্যবসা করতেন। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রীসহ তিনটি কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। একই ইউনিয়নের সুজানগর গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী সুবর্ণা (৩৬) ও পুত্র তামিম (৮) এ লঞ্চডুবিতে মারা গেছেন। তারা গতকাল সোমবার ঢাকার পিজি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে সকালে লঞ্চে ঢাকায় যান। তাদের আর ডাক্তার দেখানো হলো না। রামপাল ইউনিয়নের পানাম গ্রামের ময়না (৩৬) ও মুক্তা (১৬) এ লঞ্চে ডুবে মারা যায়। তারা দুইজন মা ও মেয়ে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে আব্দুল্লাহপুর ছলিমাবাদ এলাকার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির (৪৫) মারা গেছেন। তিনি লঞ্চ দিয়ে ঢাকা ইসলামপুরের নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। তার স্ত্রীসহ এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। চরকেওয়ার ইউনিয়নের উত্তর গুহেরকান্দি গ্রামের আঃ রব মাদবরের ছেলে উজ্জ্বল মাদবর সদরঘাটে লঞ্চ দূর্ঘটনায় মারা যান। মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নয়ন তালুকদারের বড় ভাই সুমন তালুকদার এ ঘটনায় মারা গেছেন। বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় ফারইস্টের অফিসার মোঃ কনক (৩৬) এর মৃত্যু হয়েছে। কনক সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের ধলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তিনি লঞ্চে করে ঢাকায় অফিসে যাচ্ছিলেন। এ দূর্ঘটনায় আব্দুর রউফের বন্ধু সত্যরঞ্জনও মারা গেছেন।