নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও আইন অমান্য করে পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও শ্রীনগরে বন্ধ হয়নি কোচিং বাণিজ্য। এসব কোচিং বাণিজ্যে এগিয়ে আছে শ্রীনগর সরকারি সুফিয়া এ হাই খান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় শিক্ষকই। পরের অবস্থানে আছে শ্রীনগর পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ। উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমন রমরমা কোচিং বাণিজ্য দেখে প্রশ্ন উঠেছে সরকারি আইন অমান্য করে শতভাগ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কিভাবে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে? লক্ষ্য করা গেছে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সানাউল্লাহ হক সানি, আহসান হাবিব, মনোয়ার হোসেন, শফিকুর রহমান, আতিকুর রহমানরা প্রতিনিয়ত প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। এর মধ্যে সানাউল্লাহ হক সানি ও আহসান হাবিব অন্যতম। তারা যেন কারও পরোয়া করেননা, তাদের সাথে এ বিষয়ে আলাপ হলে এমনটাই বুঝানোর চেষ্টা করেন। তারা বলেন, দেশব্যাপী এমন কোচিং চলে। সমস্যা কি? সরকারের প্রচলিত আইনে কোচিং সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কত আইনই তো হয়। কখনও কোচিং কি বন্ধ হবে? সানাউল্লাহ হক সানি ও আহসান হাবিব ওই বিদ্যালয় সংলগ্ন নুরুল আমিনের বিল্ডিংয়ে কোচিং করাচ্ছেন। ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থীকে একসাথে গাদাগাদিভাবে বসিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। এছাড়াও পাইলট স্কুলের শিক্ষক প্রদিপ সাহা, আব্দুল হালিম, আলতাফ হোসেন উজ্জ্বল, রাম প্রসাদ নন্দী, নিরাশ, খন্ডকালীন শিক্ষিকা সুপ্রিয়া সুবর্ণা, তারা কেউ বাসা ভাড়া করে আবার কেউ মন্দিরের দোতলায় কোচিং করাচ্ছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে। উপজেলার ষোলঘর এ কে এস কে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, আতাউর রহমান, আব্দুর রশিদ, রাজিব হাসান, মোঃ মহাসিন, সাইফুল, জাহিদ বিদ্যালয়ের আশপাশের বাড়ি ও রাস্তার পাশের দোকানঘর ভাড়া করে রমরমা কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজের তাহিদুল ইসলাম খোরশেদ, উজ্জ্বল তালুকদার, সাঈদ তালুকদার, বিভূতি বসু, সাধন মন্ডল, প্রার্থিব মন্ডল, পিন্টু কুমার দাস, মোকলেছ মোল্লা, তাইজুল ইসলাম, হেলালসহ অনেকেই কোচিং করছেন। বাঘড়া সরূপচন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তুষার চক্রবর্তী, নুর জামান, ফেরদৌস আলম, আল আমিন মাদ্রাসার শিক্ষক ফয়েজুল রহমান, এনায়েত হোসেন, আবু বকর, ওলিউল্লাহও প্রতিনিয়ত কোচিং চালাচ্ছেন। আরো জানা যায়, কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে উপজেলার নামিদামি কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নেতার আদলে এই কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
অন্যদিকে হিসাববিজ্ঞান কোচিং সেন্টারের অনিক সাহা, ইউএসএ এফ-২১ দেলোয়ার হোসেন, অগ্রপথিক কোচিংসহ নামে বেনামে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে শুধু শ্রীনগর বাজার ও মন্দিরের আশপাশের এলাকায়। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকারি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী কোচিং বন্ধের নির্দেশ দেয়াসহ বারবার ঘোষণা আসলেও শ্রীনগরে কোচিং সেন্টারগুলো এখনও বহাল তবিয়তে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেই। লক্ষ্য করা যায়, সকাল, দুপুর ও বিকালে পালাক্রমে চলছে শিক্ষকদের প্রাইভেট পাঠদান। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে শিক্ষকরা দেদারছে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। খোঁজখবর নিয়ে আরো জানা যায়, হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ, বাড়ৈখালী উচ্চ বিদ্যালয়, বেলতলী জিজে উচ্চ বিদ্যালয়, আলহাজ্ব কাজী ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়, বাঘড়া স্বরূপচন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কামারগাঁও আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, খোদাই বাড়ি নুরজাহান খান উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও না কোনও শিক্ষকই এ কোচিং বাণিজ্য করছেন। এসময় শিক্ষার্থী আবির, শান্ত, রিয়া, মীম, সুমাইয়াসহ অনেকের সাথে আলাপ হলে তারা বলেন, কি করবো কোচিং না করলে পরীক্ষায় পাস করা দুস্কর হয়ে যায়। ক্লাসেতো আর সবকিছু পড়ানো হয়না। তাই আমরা কোচিংয়ে পড়ছি।
আবুল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, রোকেয়া বেগম, আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের পড়ালেখার যে মান সে হিসাব অনুযায়ী অনেকটা বাধ্য হয়েই ছেলেমেয়েদের কোচিংয়ে পড়তে দিতে হচ্ছে। এমনও শিক্ষক রয়েছে তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া যায়না। উপজেলার সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও না কোনও শিক্ষক কোচিং পড়াচ্ছেন। তারা বিদ্যালয়ে ঠিকমত পড়ান না। তাদের বেশীরভাগ দেখা যায় দিনের কয়েক ব্যাচে ২০-৩০ জনকে একত্রে বসিয়ে প্রাইভেট পড়াতে। কোচিং বাণিজ্যকেই তারা প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন এমনটাই মনে করছেন সুশীল মহল।
এ বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা কোচিং পড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। আবার কেউ কেউ জানান, আমাদের অজান্তে কিছু শিক্ষক তাদের বাসা-বাড়ীতে গোপনে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের কিছুই করার থাকেনা বলেন তারা। কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকা প্রায় শিক্ষকই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
সরকারি সুফিয়া এ হাই খান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং থেকে বিরত থাকার কথা বলা সত্তে¡ও আমার কথার কোনও কর্ণপাত করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুরাইয়া আশরাফী জানান, সরকারের প্রচলিত আইন ও নীতিমালা অমান্য করে যদি কোনও শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য করে থাকেন তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।