নিজস্ব প্রতিবেদক
নামেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মান-এ নেই! ২১ জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছে ১০ জন। চিকিৎসকদের ১১টি পদ খালি রয়েছে। এক্সরে মেশিন থাকলেও পদ খালি অপারেটরের, নেই কুক, নেই মালি। ক্লিনার না থাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করতে বাইরে থেকে লোক আনতে হয়। এন্টিল্যাব টেকনিশিয়ান নেই। যন্ত্র থাকতেও ইসিজি হয়না এখানে। দীর্ঘদিনেও হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের দেখা নেই। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে হাসপাতালটি। তার মধ্যে দালালদের দৌরাত্মতো আছেই। দেখার কেউ নেই। সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও স¦াস্থ্যকর্মী সঙ্কটে বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ১৪ বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু আজও তার উন্নতি নেই। উপজেলার ২ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি মানুষের চিকিৎসা সেবায় হাসপাতালটি দীর্ঘদিনেও আলোর মুখ দেখেনি। এখনো প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগী আউটডোরে আসেন চিকিৎসা নিতে। আবার কিছু রোগী ভর্তি থাকেন এখানে। অনেক ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসাবঞ্চিত হয় বেশিরভাগ মানুষ। এ সুযোগে দিন দিন হাসপাতালকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মিনি ক্লিনিক, যার মান নিয়ে রয়েছে জনমনে প্রশ্ন। তাই দালালচক্রও রয়েছে সক্রিয়। ২০০৬ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় হাসপাতালটি উন্নীত করা হয়। সেসময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা উদ্বোধন করেন। পরে ২০১৩ সালে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ৫০ শয্যা হাসপাতালের দোতলা একটি ভবন উদ্বোধন করেন। কিন্তু ৫০ শয্যার সকল সুবিধা আজও মিলেনি এ হাসপাতালে। এখন করোনাকালীন সময়ে সে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। করোনা রোগীদের আলাদা কোন নির্দিষ্ট ইউনিট নেই। করোনায় দফায় দফায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বসার স্থানও সঙ্কট রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মীর আলী হাওলাদার জানান, চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছেন শত শত মানুষ। মিলছে না প্রয়োজন মত কোন ঔষধ। একটু কিছু হলেই ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় রোগীদের। তিনিও চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ফিরে যান, কোন ঔষধও পাননি।
এলাকাবাসী কমল কৃষ্ণ পাল জানান, ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট করা হয় হাসপাতালটি। কিন্তু ১৪ বছর পার হলেও সেই ৩১ শয্যার মতই রয়ে গেছে। এখন লোকবল সঙ্কটে বেহাল অবস্থা। করোনা ইউনিট নেই, মাঠকর্মীও সঙ্কট। হাসপাতালে ভিতরের গলিতে বাতি নেই আধো আলোতে রোগীদের চলাচল করতে হয়। নানা সমস্যায় রোগী এখন কম। এসব দেখবে কে? এমনটাই প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন পলাশ জানান, হাসপাতালে এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাম, ইসিজি ও রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে করতে হয়ে। তাই হাসপাতাল এলাকায় দালালের অভাব নেই। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হাত-পায়ের হাড় ভাঙ্গা রোগীদের নিয়ে অন্য স্থান থেকে পরীক্ষা এক্স-রে করে আবার হাসপাতালে আসা যাওয়া এসব রোগীর অনেক কষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরা বলেন, চিকিৎসক, এক্স-রে অপারেটর, এন্টিল্যাব টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন পদ শূণ্য। ক্লিনার নেই, মালি নেই, নেই কোন কুক। বাইরে থেকে লোকবল এনে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। এতো পদ শূণ্য থাকায় ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালটি ৫০ শয্যা হলেও এখনো ভবনটি চালু করা যায়নি। ডাক্তারদের বসার ভালো জায়গা নেই। প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে সেবা প্রদান করা কষ্টকর। বিশাল আউটডোরে রোগীদের সাপোর্ট দিবে সেখানেও মেডিকেল অফিসারদের ৪ টি পদ শূন্য। প্রতিদিন ৬/৭শ রোগী আউটডোরে আসছে। করোনা ইউনিট নেই। ছোট পরিসরে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছি। মাঠকর্মী ৪২ জনের মধ্যে আছে মাত্র ২৫ জন। তারপরও এবার আমরা হাম-রুবেলা টিকা সময়মত শেষ করতে পেরেছি। সিরাজদিখানবাসীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করে বলছি, আমাদের জায়গা থেকে শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।