নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত গ্রাম্য আদালতে দীর্ঘদিন ধরে এজলাসবিহীন গ্রাম্য আদালত চলছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ইউনিয়নবাসী ও নবনির্বাচিত ইউপি সদস্যবৃন্দ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রাম আদালত বিচার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর হলেও এখানে ন্যায়বিচারের প্রয়োগ ঘটে। আর সেই আদালতে এজলাসবিহীন বিচার ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বর্তমানে এজলাস ছাড়াই বিচার কাজ চলছে। গ্রাম্য আদালত এজলাসবিহীন হওয়ায় অনেকেই নানা প্রশ্ন তুলছেন।
গতকাল সোমবার সকালে কনকসার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, এজলাসবিহীন এলোমেলো কিছু চেয়ার ও টেবিল বসানো আছে। গ্রাম্য আদালতের কার্যক্রম এখানে বসে। তবে এমন চিত্র লৌহজংয়ের অনেক ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে দেখা যায়। গ্রাম্য আদালতের এজলাস নেই আবার এজলাসে থাকলেও কার্যক্রম করা হয় বিভিন্ন বাড়িতে। তালিকা চেয়ে পাওয়া যায় না।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে গ্রাম আদালত। মূলত এটা হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের কিছু কিছু মামলার নিষ্পত্তি এবং তৎসম্পর্কীয় বিষয়াবলীর বিচার সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর আওতায় গঠিত একটি স্থানীয় মীমাংসামূলক তথা সালিশি আদালত। ছোটখাটো ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধ স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে গ্রাম আদালতের এজলাস। জনবলের তুলনায় বিচার প্রার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মামলার দীর্ঘসূত্রিতা দুরীকরণে এবং সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেরূপ অবস্থা থেকেই প্রণীত হয় গ্রাম আদালত আইন।
২০০৬ সালের গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বাদী ও বিবাদী উভয়পক্ষ মনোনীত দু’জন করে মোট চারজন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠন করা হয়। তবে প্রত্যেক পক্ষ মনোনীত দু’জন সদস্যের মধ্যে একজন সদস্যকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হন। চেয়ারম্যান কোনো কারণে তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে বা তার নিরপেক্ষতা সম্পর্কে আপত্তি উঠলে, পরিষদের অন্য কোনো সদস্য আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো পক্ষ সদস্য মনোনয়ন না দিলে ওই মনোনয়ন ছাড়াই আদালত বৈধভাবে গঠিত হয়েছে বলে গণ্য করা হয়। যদি কোনো পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সদস্যকে পক্ষপাতিত্বের কারণে মনোনীত করতে না পারে, তাহলে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে অন্য কোনো ব্যক্তিকে মনোনীত করা যায়। গ্রাম আদালত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা অন্য কোনো আদালতে পুনরায় বিচার করা যায় না। তবে এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকবে।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে গ্রাম আদালত আইন সংশোধন করে ইউনিয়ন পরিষদকে ছোটখাটো মামলা নিষ্পত্তির ক্ষমতা দেয়। তারই আলোকে ‘গ্রাম আদালত বিধিমালা, ২০১৬’ জারি করে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা হয়।
কনকসার হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নয়ন দত্ত জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অভিযোগগুলো আমি লিখিত আকারে গ্রহণ করি এবং তাকে অবহিত করি। সপ্তাহে প্রায় দিন বিচার কার্য হয়। তবে বর্তমানে এজলাসবিহীন বিচারকার্য চলছে। তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যান চাইলে এজলাস তৈরি করে পরিষদে কার্য পরিচালনা করতে পারেন।
কনকসার ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. মাকসুদ মেহেদী বলেন, বতর্মানে আমাদের গ্রাম্য আদালত এজলাসসহ অন্যন্য কাজের ব্যয়ের জন্য কোন অর্থ নেই। তবে অর্থ যোগাড় হলে করা হবে।
এ বিষয়ে কনকসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিদ্যুৎ আলম মোড়ল স্বীকার করেন যে, তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কনকসার ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম্য আদালত এজলাসবিহীন অবস্থায় দেখেছেন। তবে এজলাসবিহীন আমি গ্রাম্য আদালতের কার্য চালিয়ে যাচ্ছি। পরিষদের অর্থ সমস্যা আছে এজলাস করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা পরিকল্পনা করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কনকসার ইউপিতে এজলাসবিহীন গ্রাম্য আদালত
আগের পোস্ট