নিজস্ব প্রতিবেদক
গজারিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ইতিমধ্যে দ্রুতগতির অটোরিকশার ধাক্কায় উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসারসহ দুইজনের মৃত্যু ও অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কোথাও এখন আর পায়ে চালিত রিকশা নেই। প্রায় হাজারের ওপর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে উপজেলা জুড়ে। দ্রুতগতি, অনভিজ্ঞ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক অটোরিকশা চালকদের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় দ্রুতগতির অটোরিকশার ধাক্কায় উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার মোঃ মোবারক হোসেন (৩৫) নিহত হয়েছেন। তিনি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার শঙ্করপুর গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। তিনি গজারিয়া উপজেলা জুনিয়র পরিসংখ্যান অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন রসুলপুর জামে মসজিদ থেকে মাগরিব নামাজ শেষে বের হলে দ্রুতগতিতে আসা একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দেয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৭ মাস পূর্বে মোবারক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
এর পূর্বে গত ৫ আগস্ট শনিবার সন্ধ্যায় ভবেরচর টু রসুলপুর সড়কের কালীতলা অংশে বন্ধুদের সাথে রাস্থার পাশ দিয়ে হেঁটে বাড়িতে যাচ্ছিলেন স্কুলশিক্ষক তাহসিন মিয়াজী। সেদিনও দ্রুতগতিতে আসা আটোরিকশা তাহসিনকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। দুইদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। নিহত ইব্রাহিম খলিল মিয়াজী তাহসিন (২৪) উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের চরপাথালিয়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন মিয়াজীর ছেলে। তিনি ভবেরচর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এন্ড কলেজে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করতেন।
এছাড়াও প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, আহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়া ইচ্ছামতো অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা নামাচ্ছে মালিকপক্ষ। পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ধরনের বাধা না থাকায় অনেকেই এতে উৎসাহিত হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে ব্যাটারিচালিত রিকশা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশায় অতিরিক্ত ঝুঁকি থাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকেও দেওয়া হয়নি কোনো ধরনের অনুমোদন।
বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত দ্রুতগতির গাড়িগুলো যে কাঠামোতে তৈরি করা হয়, একটি হালকা রিকশার মধ্যে শুধু মোটর লাগিয়ে দিলেই সেটি এত গতিতে চলার যোগ্যতা অর্জন করে না। যার জন্য দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। চালকরা জানে না যে কত জোরে চালালে দুর্ঘটনা ঘটবে না। অথবা রিকশাটি কত জোরে চলার ক্ষমতা রাখে। দেখা যায়, গতিসম্পন্ন মোটর লাগানো থাকলেও নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রেক কিন্তু সাধারণ রিকশার মতোই। তাই জোরে এসে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। আজও একাধিক অটোরিকশার ব্যাটারি জব্দ করা হয়েছে।