নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মাদ্রাসা থেকে শিক্ষকরা কল দিয়ে নিয়ে গেলে আর ফেরে না সাব্বির। এমন ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন পুলিশ লাইনের পাশে বাইতুল কোরআন মাদ্রাসার বিরুদ্ধে।
গজারিয়া উপজেলার টেঙ্গারচর ইউনিয়নের টেঙ্গারচর গ্রামের খাড়াকান্দি মহল্লার রজ্জব আলীর ছেলে হাফেজ সাব্বির (১৭)কে চারদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, হাফেজ সাব্বির তার নিজ গ্রাম টেঙ্গারচর খাড়াকান্দি জামে মসজিদে রমজান মাসের তারাবির নামাজ পড়াবে। গত বুধবার তার মাদ্রাসা থেকে তাকে কল দিয়ে যেতে বলেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা। যথারীতি সে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে মাদ্রাসায় পৌঁছায়। বাসা থেকে সাব্বিরের বড় বোন তাহমিনা মাদ্রাসায় কল দিয়ে সাব্বিরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ বলে, সে রুমে পড়ছে। এখন দেয়া যাবে না।
পরে আরো কিছুক্ষণ আবার কল দিয়ে বলে হুজুর জরুরি একটু সাব্বিরকে দেন কথা বলবো। তখন জাকারিয়া হুজুর নাকি বলেন, এখন আমি অফিস রুমে এখন পারবো না। এমন করতে করতে আসর নামাজ শেষ করে মাদ্রাসা থেকে একটি কল আসে তাদের ফোনে যে, সাব্বির চলে গেলো আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেলো না, ছাত্রদের বলে গেল না।
তখন সাব্বিরের পরিবার জানায়, না সে তো কখনো না বলে আসেনা। সে কেনো না বলে চলে আসবে? রাত হয়ে গেছে সাব্বির না আসায় তারা আবার মাদ্রাসায় কল দেয়। তারা বলে, সাব্বির চলে গেছে। এদিকে সাব্বির বাড়িতেও ফিরেনি। পরেরদিন সাব্বিরের পরিবার তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় খবর নেয়। সেখানেও সাব্বির যায়নি। এতে সাব্বিরের দরিদ্র পরিবার ভেঙে পড়ে। তাদের একটিমাত্র ছেলে সন্তান।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, পরেরদিন সাব্বিরের মা মাদ্রাসায় গেলে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং শিক্ষকদের গা সারা বক্তব্য। তারা এমনভাবে বলতে থাকে যে তারা যেনো সাব্বিরকে চিনেনই না।
এমতাবস্থায়, সাব্বিরের পরিবার ফতুল্লা থানায় একটি ডায়েরি করেন মাদ্রাসার বিরুদ্ধে।
মুঠোফোনে মাদ্রাসার পরিচালক জুনায়েম সাইদ এর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জানা যায়, সাব্বির তাদের সাবেক ছাত্র। সে পাশ করে বের হয়ে গেছে। তবে সে মাদ্রাসায় এসে শিক্ষকদের জানায়, সে নিজ গ্রামের একটি মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়াবে। এজন্য কিছুদিন মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করবে। পরে সাব্বির একদিন বাড়ি আসবে তার নিকট নাকি টাকা ছিলো না পরে মাদ্রাসার দুই মুফতী স্যারের নিকট থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি আসে আর বলে বাড়ি থেকে একদিন পর এসে দিয়ে দিবে। সময়মত না ফেরায় নাকি মাদ্রাসার ঐ শিক্ষক তাকে টাকা দেবার জন্য মাদ্রাসায় ডাকে। সাব্বির তাদের উত্তরে বলেন, বুধবার সকালে সে মাদ্রাসায় যাবে যথারীতি মাদ্রাসায়ও যায়। তবে এ যাওয়াই যেনো তার শেষ যাওয়া। গতকাল শনিবার চারদিন হলো মিলেনি কোনো সন্ধান নারায়ণগঞ্জ বায়তুল কোরআন মাদ্রাসার হাফেজ ছাত্র সাব্বিরের।
সাব্বিরের গ্রামের ওস্তাদ হাফেজ মোস্তফা কামাল নারায়ণগঞ্জের ঐ মাদ্রাসায় কল দিলে মাদ্রাসার শিক্ষক জাকির সাহেব নাকি তাকে জানায়, সাব্বির বুধবার ১২টায় মাদ্রাসা থেকে চলে গেছে।
তবে পরিবারের অভিযোগ, সাব্বিরের সঙ্গে দুপুর আনুমানিক ২টার পর থেকে আসর নামাজের আগ মুহুর্তে দুইবার কল দিয়ে কথা বলতে চাইলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বারবার মিথ্যা কথা বললো কেনো যে সাব্বির পড়ছে এখন ফোন দেয়া যাবে না। পরবর্তী কলে বলেন, তারা অফিস রুমে এখন দিতে পারবেন না।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি গা সারা বক্তব্য দেন। হয়তো শিক্ষকরা ভুলে বলেছে সাব্বির পড়ছে এমন কিছু বা সাব্বির বেলা ১২টা বাজে চলে গেছে এমন কিছু। আবার মাদ্রাসা থেকেই কল দিয়ে আসর নামাজের পর জানায়, সাব্বির না বলে চলে গেলো কেনো? আর সাব্বির যদি ১২টা বাজে চলে আসে তাহলে তার জন্য মাদ্রাসার জুনিয়র ছাত্ররা দুপুরের জন্য খাবার নিয়ে গেলো কেনো? এ কথার জবাবে পরিচালক জানান, সাব্বির আমাদের মাদ্রাসার বর্তমান ছাত্র না। আর আমরা মাদ্রাসা থেকে সাব্বিরকে কল দিয়ে আসতে বলিনি। মাদ্রাসার যে শিক্ষকের সঙ্গে টাকার লেনদেন ছিলো সে শিক্ষক জানেন। প্রশ্নের জবাবে জানতে চাওয়া হলে সাব্বির বাড়ি চলে আসলে তার মাদ্রাসার মালামাল নিয়ে আসলো না কেনো? তখন কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি মাদ্রাসার পরিচালক জুনায়েদ সাইদ। তিনি জানান, পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের ডেকেছিল। আমরা পুলিশকে যা বলার বলেছি। এখন আপনারা এ বিষয়ে লেখালেখি না করলে হয় না? আর সাব্বিরের বাবা-মা আমাদের মাদ্রাসাকে অভিযোগ করছে। আমাদের মাদ্রাসার সভাপতি কিন্তু ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ বিষয়ে এমন রাজনৈতিক নেতার নামে কি বোঝাতে চাচ্ছেন মাদ্রাসার পরিচালক?