নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রাম পুলিশ সুফিয়া বেগম (৫০) এর জমি দখলের পায়তারা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত আইজুদ্দিন ফকিরের ছেলে সাইফুল ফকির (৫২), আব্দুল রাজ্জাক (ফন্নু ৪৮), এফ এম শাহিন ফকির (৪০) এর বিরুদ্ধে টঙ্গীবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম পুলিশ সুফিয়া বেগমের জমিতে ২৭ শতাংশ সরিষা ছিলো। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা রাতের আঁধারে সরিষা নষ্ট করে জমি চাষ করে রেখে যায়।
এ প্রতিবেদকের কাছে সুফিয়া অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবেশী সাইফুল ফকির গং আমার জমির ফসল নষ্ট করে চাষ করে রেখে যায়। তাদের বিরুদ্ধে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি আরো বলেন, সাইফুল ফকির গং দীর্ঘদিন যাবৎ আমার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি দখল করার পায়তারা করছেন। আমাকে ও পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা বিজ্ঞ আদালতেও আমি একটি মামলা দায়ের করেছি। আমার এই জমি আমি বিক্রি করবো না। তারা বলছে বিক্রি করতে।
তিনি আরো জানান, ১৫ বছর আগে মৌখিকভাবে আর এস ৯৫৬ দাগ নং ৫৪৩ জমি ২৭ শতাংশ চাষাবাদ করে ফসল ফলিয়ে তাদের ভোগ করার দায়ে রেখে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ধার হিসেবে গ্রহণ করি। বর্তমানে টাকা পরিশোধ করার জন্য গেলে তারা জমি বিক্রি করার জন্য বলে।
সুফিয়া বেগমের স্বামী শহিদ মোল্লা বলেন, আমার স্ত্রীর সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের জন্য এলাকার প্রভাবশালী কিছু লোক বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র করছে। সর্বশেষ আমাদের সরিষা নষ্ট করে রাতের আঁধারে জমি চাষ করেছে। তারা আমাদেরকে জমি বিক্রি করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। থানা পুলিশ তাদের নিয়ে থানায় বসার জন্য চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কাজ হয়নি।
অভিযুক্ত মৃত আইজুদ্দিন ফকিরের ছেলে সাইফুল ফকির বলেন, আমার বাবা জীবিত থাকতে টাকা নিয়েছে জমি বিক্রি করবে বলে। এখন টাকা ফেরত দিতে চায় জমি বিক্রির কথা অস্বীকার করেন।
জমি বিক্রি করা বা টাকা ধারের জমি বিক্রি এমন কোন উল্লেখিত কাগজপত্র নেই তাদের কাছে। এ প্রতিবেদক তাদের কাছে প্রমাণ দেখতে চাইলে তারা কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। তারা বলে মৌখিকভাবে কথা হয়েছে।
অভিযুক্ত এফ এম শাহীন ফকিরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সুফিয়া আপার পরিবারের সাথে আমাদের অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। জমিটির একটি সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং অগ্রিম হিসেবে টাকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা জমিটি বিক্রি করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে আমরা জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য দিয়ে ক্রয় করতে রাজি আছি। সে আমি ও আমার ভাইদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে উভয়ের সাথে কথা বলেছি। যার জমি সে বিক্রি করতে ইচ্ছুক নয় এবং অপরকক্ষ ক্রয় করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। আমি কিছুই করতে পারছি না বলে দুঃখিত। তবে জমিটি গ্রাম পুলিশ সুফিয়া বেগম মালিকানাধীন। তিনি আদালতে মামলা করেছে বলে আমি অবগত আছি।
প্রতিপক্ষ তার সরিষা নষ্ট করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি উভয়পক্ষকে এক স্থানে বসে গ্রাম্য সালিশের জন্য অনুরোধ করেছি।
টঙ্গীবাড়ী থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সম্রাটের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি। তবে বিজ্ঞ আদালতে এ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে সরিষা ফসল ক্ষতির অভিযোগ দিয়েছে তাদের থানায় আসতে বলেছি।
টঙ্গীবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্লা সোহেব আলী বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখবো। জমির মূল মালিকের সম্পত্তি কেউ জোর করে ক্রয় করতে চাইলে এবং তাকে ভয়-ভীতি দেখানো হলে তা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।