নিজস্ব প্রতিবেদক
বিগত ১৫ দিনে ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ী ও কৃষি জমি। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত নদী শাসন না করলে জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে অনেক গ্রাম ও ইউনিয়ন। ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ব্যাগে নিয়ম অনুযায়ী বালু ভরাট হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এছাড়াও সরকারী কাজ হলেও স্থানীয়দের থেকে টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভূতুর বিরুদ্ধে। ভাঙ্গন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা কর্মসূচিতে স্থানীয়দের থেকে দাবীকৃত টাকা না দেওয়ায় হাইয়ারপাড়ে ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছেনা এমন অভিযোগও রয়েছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চোখের সামনে নদীতে চলে যাচ্ছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। গত ১৫ দিনে একে একে বসতবাড়ী ও কৃষি জমি পদ্মার করাল গ্রাসে চলে যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে ভাঙ্গনের তীব্রতায় নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। কয়েক দফা ভাঙ্গনের কবলে পড়ে শেষ আশ্রয়স্থল হারানোর ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষগুলোর। ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে নদী পাড়ে বালুভর্তি ১৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে সরকারী অর্থায়নে জিও ব্যাগ ফেলার কাজে ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলো থেকে মোটা অংঙ্কের টাকা নেয়াসহ নানা ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ভাঙ্গন কবলিত হাইয়ার পাড়ের বাসিন্দারা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের থেকে মোটা অংঙ্কের টাকা দাবী করেছিলেন সেই টাকা না দেয়ায় আমাদের গ্রামে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছেনা। এর দুই বছর আগেও আমাদের গ্রাম থেকে নদীতে বাঁধ দিবে বলে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। এবার আরো বেশি চাচ্ছে। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের গ্রাম নদীগর্ভে চলে যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভাঙ্গন কবলিত এক নারী বাসিন্দা বলেন, সরকারী অর্থায়নে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও আমাদের থেকে টাকা নিয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান। তাছাড়া এখন যে অবস্থায় নদী ভাঙ্গছে তাতে মানুষের অনেক দুর্দশা। এখানে ঠিকাদাররা যে কাজ করছে তা ঠিকমতো হচ্ছে না। বালির বস্তা যেভাবে ফেলার কথা সেভাবে ফেলছে না। কম ফেলছে, আরও বেশি করে বালির বস্তা ফেলতে হবে।’ নাম গোপন রাখার শর্তে ভাঙ্গন কবলিত বাসিন্দারা বলেন, আমাদের থেকে টাকা নেয়ার সময় কথা ছিলো বস্তার মধ্যে মোটা বালি দিবে। কিন্তু ঠিকাদাররা দিচ্ছেন চিকন বালু। মোটা বালি দিলে নদীর মধ্যে যখন বস্তা ফেলতো তখন তা শক্ত মজবুত হতো। কিন্তু চিকন বালু দেওয়ার কারণে যখন বস্তা ফেলছে বালি তো নদীর পানিতে ভেসে যাবে। দায়িত্বরতরা কাজর প্রতি অবহেলা করছে। যে পরিমাণ বস্তা ফেলার কথা তা ফেলা হচ্ছে না। কিন্তু অল্প কিছু বস্তা ফেলে ফাঁকি দিয়ে কাজ চলছে।’ সরকারী কাজে নিজের অর্থায়ন রয়েছে এমন কথা জানিয়ে ভাঙ্গন কবলিতদের থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু বলেন, এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। আমি কাজের ঠিকাদার মাত্র। তাই আমি নিজে উপস্থিত থেকে কাজ পরিচালনা করছি। টাকার নেয়ার বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট বলেও দাবী করেন তিনি। টাকা নেয়ার বিষয়টি জানা নেই দাবী করে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মদ হাসিনা আক্তার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে নদী ভাঙ্গন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে। এ সুযোগে কেউ যদি ভাঙ্গন কবলিতদের থেকে টাকা নিয়ে থাকেন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পদ্মা নদীর এমন রাক্ষুসে ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান টঙ্গিবাড়ীবাসী।