নিজস্ব প্রতিবেদক
আলু উত্তোলন মওসুম ঘিরে অজানা শঙ্কায় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নবাসী। বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান গ্রুপের দ্বন্দ্বে দিকহারা হয়ে পড়েছে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শত শত মানুষ। গ্রামছাড়া করে জোরপূর্বক আলু তুলে নেয়া, আলুর স্তুপে আগুন ধরিয়ে দেয়া এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা এখন নিত্যদিনের। মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে শান্তি ফেরা নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারী ও সাবেক চেয়ারম্যান মহসীনা হক কল্পনা- দুই গ্রুপকে নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছউজ্জামান আনিছ বৈঠক করলেও কোন আশার আলো তৈরি হয়নি। সাবেক ও বর্তমান দুই চেয়ারম্যান গ্রুপ এলাকায় আলাদা আলাদা বৈঠক করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বর্তমানে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের আধিপত্য চলছে বলে বিরোধীপক্ষের অভিযোগ। গত বছরের ২৮ নভেম্বর এই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক চেয়ারম্যান মহসীনা হক কল্পনার লোকজন গ্রামছাড়া হয়ে পড়ে। নির্বাচনের পর মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি গ্রামের কামাল কাজীর প্রায় ৫৮৪ শতাংশ জমি দখল করে নেয় চেয়ারম্যান সমর্থক বিএনপি নেতা উজির আলী গ্রুপ। গত বছরের ডিসেম্বরে মোল্লাকান্দির মাছিমপুর ও বেহেরপাড়া মৌজার ৭টি দাগের ৫৮৪ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করার জন্য হালচাষ ও সার দিয়ে বীজ রোপণের উপযোগী করা হয়। এরপর ওই জমি চেয়ারম্যান সমর্থক বিএনপি নেতা উজির আলীর নেতৃত্বে শাহিদুল মাদবর, ওমর হোসেন, রহমান বেপারী, দেলু সরকার ও আনোয়ার হোসেন মিলে দখল করে জোরপূর্বক আলু রোপণ করে। এ ঘটনায় কামাল কাজীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নং-৫৮৫। বর্তমানে আলু উত্তোলনের মওসুম শুরু হলে উজির আলী গং জোরপূর্বক জমি থেকে আলু উত্তোলনের চেষ্টা করলে কামাল কাজী গত ২৩ মার্চ এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর অভিযোগের তদন্তে যায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানার এস আই মো. কাজল। তিনি দুইপক্ষকে থানায় আসার নির্দেশ দেন। এরপর গত ২৬ মার্চ উজির আলী গং জোরপূর্বক আলু উত্তোলন শুরু করে। এ ঘটনায় সদর থানার এস আই মো. বাসার ঘটনাস্থলে গিয়ে কামাল কাজীকে শাসায় এবং দখলকারীদের আলু উত্তোলন করতে বলে চলে যায় বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
এদিকে, ৮ মার্চ রাত ১০টার দিকে এলোপাতাড়ি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে মুন্সীকান্দি গ্রামে কামাল কাজীর বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে উজির আলীর নেতৃত্বে। এ ঘটনায় ১০ মার্চ কামাল কাজী বাদী হয়ে বিএনপি নেতা উজির আলী, শাহিদুল মাদবর, পরাণ, বাবু মাদবর ও জমির হোসেনসহ ১৮ জনকে আসামি করে সদর থানায় ভাঙচুর ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। মামলা নং-৩১। এ ব্যাপারে মুন্সীকান্দি গ্রামের কামাল কাজীর ভাই রবিউল কাজী জানান, জমিতে পুলিশ নিয়ে গেলে তার ভাই কামাল কাজীকে এসআই বাসার ভয় দেখায় এবং কামাল কাজীকে বলে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। উজির আলী ও শাহিদুল মাদবর গংকে এসআই বাসার আলু তোলার কথা বলে চলে যায়। তিনি আরো জানান, আমাদের পারিবারিক এই ৫৮৪ শতাংশ জমি নাডি (জমি ভাড়া) দিলেও ৭-৮ লাখ টাকা পাওয়া যেত।
এ ব্যাপারে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহসীনা হক কল্পনা জানান, তিনি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তার পক্ষের লোকজনের ওপর একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে। এখন ফসলি জমির আলু জোরপূর্বক নিয়ে যাচ্ছে।
জমির আলু জোরপূর্বক নেয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারী বলেন, এসব বিষয়ে আমার জানা নাই। এ ব্যাপারে সদর থানার এসআই মো. কাজল জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে দুইপক্ষকে থানায় আসতে বলেছিলাম। কিন্তু উজির আলী ও শাহিদুল গ্রুপ থানায় আসেনি।