নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি চাকুরি করলেও অফিস সময়ে অফিসে না গিয়ে নিজ ভাড়াটিয়া বাসায় বসে রোগী দেখার অভিযোগ পাওয়া গেছে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকার বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। এ নিয়ে এর আগেও অনেক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও সে অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সরেজমিনে গত শনিবার সকাল ১০টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা নারগিস বেগমের কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন অফিস কক্ষ তালা দেখে ফিরে যাচ্ছে।
খোদ ওই অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই কল্যাণ কেন্দ্রে শনি, রবি ও বুধবার চিকিৎসা দেওয়ার কথা নারগিস বেগমের। কিন্তু অধিকাংশ সময় তিনি অফিসে আসেন না। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে ওই পরিদর্শিকা নারগিস বেগমের মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাট বালিগাঁও গ্রামের ভাড়া বাসায় উপস্থিত হলে দেখা যায়, তিনি ওই ভাড়া বাসায় রোগী দেখার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার বাসার টেবিলের উপরে রয়েছে সরকারি ঔষধের বাক্স। ঘরের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা দেওয়ার বেডসহ বিভিন্ন সামগ্রী।
স্থানীয়রা বলেন, নারগিস বেগম নিজবাড়িতে দীর্ঘ সময় রোগী দেখেন। বাড়িতেই করেন নর্মাল ডেলিভারি। একেকটি নরমাল ডেলিভারি করাতে ৫ হাজার হতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জ নেন তিনি। এর আগে ওই পরিদর্শিকা টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাটবালিগাঁও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাকে ওই অফিস থেকে বদলি করা হয়। এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই অফিস কক্ষে তালা মেরে উধাও হয়ে যান তিনি। গত ৬ মার্চ হাটবালিগাঁও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে মমতাজ বেগম নামে একজন যোগদান করলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে তিনি চিকিৎসা সেবা দিতে পারছিলেন না। দীর্ঘ ২ মাসের অধিক সময় ওই কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকায় সেসময় সেবাবঞ্চিত হয় রোগীরা। পরে এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে অফিস কক্ষের তালা খুলে দিতে বাধ্য হন তিনি।
ওই অফিসের একাধিক সূত্র জানায়, নার্গিস বেগমকে বালিগাঁও পরিবার পরিকল্পনা অফিস থেকে বদলি করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। তিনি কিছুতেই এ অফিস থেকে যেতে চাচ্ছিলেন না। পরে এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি খিদিরপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে যোগদান করলেও রয়ে গেছেন বাসা নিয়ে বালিগাঁও বাজারে এবং সেখানে থেকেই বাসাটিকে মিনি ক্লিনিক বানিয়ে দিচ্ছেন টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা নারগিস বেগম বলেন, আমি খিদিরপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে সপ্তাহে ৩ দিন যাই। আর ৩ দিন বাহিরে অন্য কাজ থাকে। আজ তো আপনার ওখানে ডিউটি করার কথা গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে, সকালে গিয়েছিলাম বলে তিনি জানান। কিন্তু অফিস সময় শুরু হতেই আপনার কক্ষ তালা দেয়া ছিল কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি।
পরে তিনি বলেন, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী কম আসায় আমি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আগে যাই তারপর বাসায় চলে আসি। বাড়িতে রোগী দেখার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, অফিস সময়ের পরে আমি বাসায় রোগী দেখি। আপনি একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা হিসাবে রোগী দেখার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী না, আত্মীয়স্বজন আসে তাদের দেখি। বাড়িতে সরকারি ঔষধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঔষধ নিয়ে ফিল্ডে গিয়েছিলাম। বাড়িতে এনে রেখেছি আবার অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো।
এ ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আলী আমজাদ দপ্তরি বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি এমন হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।