নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার উত্তর মশদগাঁওয়ে ১ একর কৃষিজমি অনাবাদির আশঙ্কা। উপজেলার ঘোড়দৌড় বাজার থেকে নাগেরহাট বাজার রাস্তা কনকসার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড উত্তর মশদগাঁও রাস্তার সেতুর পূূর্বপাশের কৃষিজমি ড্রেজার দিয়ে ভরাট। এতে কৃষিজমির পানি নিষ্কাশনের খালের পথ বন্ধ। পানি নিষ্কাশনের পথ ৭০ ভাগ ভরাট করে খাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খাল দখলে ওই এলাকার কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় হতাশ কৃষক। ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের অভাবে ১ একর জমি অনাবাদি থাকবে বলে স্থানীয় বিভিন্ন কৃষকের মত। স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রশ্ন, অপরিকল্পিত কৃষিজমি ভরাটের দায় কে নেবে? স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন কার্যকরী ভূমিকা।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কনকসার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের উত্তর মশদগাঁও সড়কে খালের উপর ২৮ ফুট সেতু, যা বাস্তবায়নে কাজ করেছে লৌহজং উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। সেতুর পূর্বপাশের কৃষিজমি ড্রেজারের মাধ্যমে ভরাট করা হয়েছে। সেই সাথে সেতুর নিচে পানি নিষ্কাশনের পথ ভরাট করা হয়েছে।
উপস্থিত স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কনকসার স্থানীয় বাসিন্দা ও কনকসার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির নেতা মোঃ বাবুল ঢালী ক্রয় করে কৃষিজমি ভরাট করেছেন। এই জায়গা ভরাট কাজে ড্রেজার পাইপ বসিয়ে মাটি ভরাট করেছিলেন মশদগাঁও স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ হাবিব খান।
এ বিষয়টি নিয়ে মোঃ বাবুল ঢালীর সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোনের জবাব দেননি এবং তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার বাড়িতে গিয়ে বাড়িতে থাকা কেয়ারটেকারের মাধ্যমে তার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাড়িতে কবে আসবেন তিনি জানেন না বলে জানান।
মোঃ হাবিব খানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ এখন তেমন কিছু বলতে পারব না। পরে ফোন করবেন।
কনকসার ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ সদস্য মোঃ সোহেল ফকির জানান, রাতের আঁধারে ভরাট করা হয়েছে এই কৃষিজমিটি, খালের পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করে। আমি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেছি, কোন কাজ হয়নি। সর্বশেষ উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি আমি উপস্থাপন করেছি। তাতেও এ পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি।
কনকসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ বিদ্যুৎ আলম মোড়ল বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে রাতের আঁধারে ভরাট করা হয়েছে কৃষিজমি ও খালের পানি নিষ্কাশন পথ। বিষয়টি আমি জানতাম না। তবে এই এলাকার কৃষকেরা আমার কাছে এসে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এ বছর পানি নিষ্কাশনের কোন পথই নাকি দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমি বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেছিলাম। তার বদলিজনিত কারণে বিষয়টি সমাধান করতে পারিনি। কৃষকের জমিতে পানি নিষ্কাশনের পথ খুলে দেয়ার জন্য আমি প্রশাসনের কাছে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
লৌহজং উপজেলা কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইলিয়াস শিকদার জানান, খালের পানি নিষ্কাশনের পথ ভরাট করা হয়েছে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়েছি। আমার অফিস থেকে লোক পাঠাবো এবং তদন্ত করে দেখবো। তদন্ত করে যাচাই-বাছাই শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি আজ আমি জানতে পেরেছি। সাথে সাথে সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসে কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। কৃষিজমি রক্ষার স্বার্থে এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমাদের যা করার দরকার তা করবো। কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। আমরা প্রশাসন সহযোগিতা করছি যতটুকু সম্ভব।