নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বেসরকারি ক্লিনিক, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য। এতে বিভিন্ন ভুল চিকিৎসার বলি হচ্ছে আগত রোগীরা। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স থাকলেও বেশিরভাগেরই নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স থাকলেও কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই চালাচ্ছে চিকিৎসা। ফলে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিসহ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
উপজেলাবাসীর অভিযোগ, অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে পরিচালিত অধিকাংশ এসব ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবৈধ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন তারা।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শ্রীনগর উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে মোট ৩০টি। এর মধ্যে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স থাকলেও বেশিরভাগেরই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। আবার অনেকের লাইসেন্স থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। লাইসেন্স নবায়ন না করেই চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নিজস্ব চিকিৎসক, ডিপ্লোমা নার্সসহ যে পরিমাণ জনবল থাকার কথা তা নেই অনেকগুলোতে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক চলছে প্রশাসনের নাকের ডগাতেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম। অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই ডিপ্লোমা পাস করা প্যাথলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এরপরও বছরের পর বছর ধরে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কয়েকটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে তা যাচাই বাছাই করে পরে জানাতে পারবে।
শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা আবু তোহা আদনান শাকিল বলেন, আমার জানা মতে, উপজেলায় ৩০টির মত কোনটি শুধু ক্লিনিক আবার কোনটি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। তারা সরকারী লাইসেন্সসহ পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়ে ব্যবসা করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কমিশনের লোভে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু দালাল চক্র। ফলে উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। এছাড়া যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে সেগুলোও বছরের পর বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন না করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।