নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিত্যক্ত ভবনে মাদকসেবীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। সাবেক পশু হাসপাতালের পরিত্যক্ত এই দুটি ভবনে ৬টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি কক্ষে অফিস ছুটির দিনে ও প্রায়ই রাতের কোন কোন সময়ে, হিরোইন, ইয়াবা ও গাঁজাসহ মাদক সেবন করে মাদকসেবীরা।
প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাতে হাসপাতাল কোয়ার্টারে ২ জন কর্মচারী থাকলেও তারা ভয়ে বের হন না। এমনকি তারা কিছু বলতেও সাহস পান না। তারা আরো জানান, এসব কারণে তাদের অফিসে চুরি হয়েছে বেশ কয়েকবার। গত মাসে দুইবার বিদ্যুতের মিটার থেকে অফিস পর্যন্ত মূল লাইনের প্রায় একশত গজ বিদ্যুতের তার (ক্যাবল) চুরি হয়েছে।
কাজীরবাগ গ্রামের শাহাদত খান জানান, আমরা লোকজন নিয়ে পশু হাসপাতাল এলাকায় কয়েকদিন আগে রাত ১১টার দিকে মাদকসেবীদের ধাওয়া করেছি, ধরতে পারিনাই।
মালখানগর গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, এ গ্রামে সরকারি এতো বড় প্রতিষ্ঠান সেখানে মাদকসেবীদের আস্তানা! তাদের কত সাহস সেখানে ঢুকে নেশা খায়। পুলিশের কার্যক্রম আরো জোরদার করা উচিত।
মালখানগর ইউনিয়নের মাদকবিরোধী আন্দোলন ও অভিযানের সদস্য আলী ইসলাম মাদবর বলেন, এলাকার সকল মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে হবে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে পুলিশ তাদের আটক করছে। এরপরও বিক্রয়, সেবন চলছেই। পুলিশসহ সমাজের সকলকে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শবনম সুলতানা জানান, অফিস বন্ধের দিনে বা রাতে মাদকসেবীরা পরিত্যক্ত ভবনে বসে হয়তো সেবন করে, কক্ষের যে অবস্থা এমনটা মনে হচ্ছে। আমাদের কোন নাইটগার্ড নাই। তাছাড়া বাউন্ডারি ওয়াল পুরোটা নাই এবং যতটুকু সামনের দিকে আছে সেখানকার কাঁটাতারগুলো চোরেরা কেটে নিয়েছে। আমার আগে এখানে দায়িত্বে ছিলেন ডা. হাসান আলী। তিনি পরিত্যক্ত ভবন দুটো ভাঙ্গার জন্য জেলার ডিডির নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। আমরাও যোগাযোগ করেছি। যতটুকু জানতে পেরেছি, চলতি বছরের জুনে ভবন ভাঙ্গার একটা ব্যবস্থা হবে। এখানে মাদক সেবনের আস্তানা আগে বুঝতে পারিনি। এখন রুমের অবস্থা দেখে আশ্চর্য হলাম। আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।
সিরাজদিখান থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজগর হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মাদক হবে জিরো টলারেন্স। আমরা মাদক নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছি। আইজিপি মহোদয় ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা মাদককে জিরো টলারেন্সে নামিয়ে আনতে চেষ্টা করছি। প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের বিট অফিসার ও সহকারি বিট আফিসার কাজ করছে। পাশাপাশি আমরা অভিযান চালাচ্ছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে। মালখানগর, রাজানগর, বাসাইল, বয়রাগাদী, কেয়াইনসহ প্রতিটি ইউনিয়নেই মাদকসেবী ও বিক্রেতা রয়েছে। এসকল ইউনিয়ন হতে আমরা মাদক কারবারি ও সেবনকারীদের আটক করে মামলা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে পাঠিয়েছি। দুঃখের বিষয়, তারা সাজা খেটে বা জামিনে এসে আবার সেই কাজটিই করে। পুলিশের একার পক্ষে নির্মূল করা সম্ভব না, যদি এলাকাবাসী, সমাজপতি, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, সামাজিক সংগঠনগুলো সহযোগিতা না করে। তাছাড়া মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরও সচেতনতায় ভূমিকা রাখতে হবে।