নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করেই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। জাতির পিতার আদর্শ চির অনির্বাণ হয়ে প্রজ্জ্বলিত থাকবে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। বাঙালি ও বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কালজয়ী নাম।
গতকাল বুধবার জাতীয় শোক দিবসের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে চরকেওয়ার ইউনিয়নের আলীরটেক বাজার, গজারিয়াকান্দি, ভিটি হোগলা, বাঘাইকান্দি, নলবুনিয়াকান্দি, খাসকান্দিতে গণভোজ, খাবার বিতরণ, আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আল মাহমুদ বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম মাওলা তপন, মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহাসীনা হক কল্পনা, জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আবুল কাশেম, চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সিরাজ জমাদ্দার, বজলুর রহমান, রাকিবুল ইসলাম রকি, তারা বেগম, কামাল হোসেন, দেলোয়ার কাজী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মামুন হাওলাদার, জেসমিন আক্তার জুঁই, আওয়ামী লীগ নেতা আলমাস কাজী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সেন্টু সিকদার, যুবলীগ নেতা আবুল হাশেম ভূইয়া, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ মৃধা, ইউনিয়ন কৃষক লীগ সভাপতি মিলন কবির প্রমুখ।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, একজন নেতা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল অতুলনীয় দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি অপরিমেয় ভালোবাসা। একজন মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অসীম সাহসী, বিশাল হৃদয়ের এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গীর সহজ-সরল মানুষ। নীতি ও আদর্শে তিনি ছিলেন দৃঢ় প্রতীজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবনের কেন্দ্র ছিল জনগণ। জনগণের জন্য ভালোবাসা ছিল তার সব কর্মকান্ডের প্রেরণা, জনগণের ওপর বিশ্বাস ছিল তার কর্মকান্ডের ভিত্তি এবং জনগণের কল্যাণই ছিল তার সকল কর্মকান্ডের লক্ষ্য। নির্যাতিত-নিপীড়িত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-শোষিত মানুষের মুক্তিই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র ব্রত।
তিনি বলেন, পর্বতের ছবি কাগজে আঁকা যায়, মুছেও ফেলা যায়। কিন্তু বাংলার সিথানে যে দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়, তাকে মুছে ফেলা যায় না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকেও নয়। তার সংগ্রামকেও নয়। তার অর্জনকেও নয়। এই অর্জন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই অর্জন মুক্তিযুদ্ধের। বঙ্গবন্ধুর নামকে যেমনি জোর করে প্রতিষ্ঠা দেবার প্রয়োজন পড়ে না, তেমনি জোর করে মুছে দেওয়াও সম্ভব হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, চীনের মাও সেতুং, ভিয়েতনামের হো চি মিন, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ, আফ্রিকার প্রণম যুক্ত, উপনিবেশ ঘানার প্রেট্রিস লুলম্বা, নক্রুমা, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, নামিবিয়ার স্যাম নওমা, রাশিয়ার লেনিন, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো আর বাংলাদেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের রাখাল রাজা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নামে এঁরা এক না হলেও কীর্তিতে এঁরা এক, গৌরবে এরা ভাস্বর। যে নাম শেখ মুজিবÑসে নামের সাথে মিশে আছে বাংলা, বাঙালি আর বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একজন বিশ^বরেণ্য নেতা ছিলেন- যার নেতৃত্ব, সাহস, সততা, দক্ষতা, কৌশল, দূরদর্শিতা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী সমসাময়িক বিশ^নেতৃবৃন্দকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন বিশ্বমুক্তিকামী মানুষের অন্যতম পথিকৃৎ, অকৃত্রিম সুহৃদ, নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের জাগরণের অনুপ্রেরণা, সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ উপনিবেশবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ ও বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াকু বীরসেনানী, জোট-নিরপেক্ষ তৃতীয় বিশ্বের অনন্য প্রবক্তা নিরস্ত্রীকরণে বিশ্বাসী শান্তির দূত, জুলিও কুরি পদক বিজয়ী শান্তি সংগ্রামী। তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশে^র লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত-শোষিত মানুষের মুখপাত্র। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
তিনি বলেন, বাংলা ও বাঙালির প্রতি ছিল বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম দরদ। ক্ষণজন্মা যে পুরুষ জাতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার উজ্জ্বল পতাকা; কিন্তু ঘাতকের বুলেটে তিনি পেয়েছেন নির্মম প্রতিদান। আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচি শেষে দেশকে শান্তি অগ্রগতির পথে নিয়ে এসেছিলেন তখন এই মহামানবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, বাঙালির আদর্শ পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন প্রজন্মের মন-মননে চিন্তা-চেতনে আদর্শ-অনুপ্রেরণে চেতনায়-জাগরণে প্রদীপ্ত শিখারূপে প্রবাহমান। ক্ষণজন্মা এই মহামানবের স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারই নির্দেশিত পথ ধরেই এগিয়ে যাবার দৃপ্ত শপথে বাঙালি জাতি আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষা প্রত্যয় ও প্রত্যাশার বিশ^স্ত ঠিকানা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।