নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে মাওয়া পর্যটন এলাকা খ্যাত মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মাওয়া পুরাতন ঘাট ও মাওয়া মৎস্যবাজার বেশিরভাগ রাস্তার বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরে। মাওয়া চৌরাস্তা থেকে পুরাতন ফেরি ঘাট এলাকা পর্যন্ত রাস্তা খানা-খন্দে ভরা বলে মাওয়া চৌরাস্তা থেকে গাড়িচালক যেতে চান না। আর যাত্রীদের অনুরোধে গেলেও হাঁকান অনাকাক্সিক্ষত ভাড়া। কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স যে সঠিক সময় পৌঁছাবে সেটারও নিশ্চয়তা নেই।
গাড়িচালকদের অভিযোগ, ভাঙা রাস্তার কারণে গাড়িগুলো বিকল হয়ে যাচ্ছে। এখানে পর্যটক ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে এসে চলাচলে বিড়ম্বনায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছে। এখানকার এলাকার ছোট ব্যবসায়ীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতে দিন কাটছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, লৌহজংয়ের মাওয়া চৌরাস্তা পদ্মা সেতুর নিচে থেকে মাওয়া পুরাতন ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কটি যাতায়াত ও মালামাল পরিবহণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সাফল্য পদ্মা সেতু, তবে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা যেন অবহেলায় ভরা।
লৌহজং উপজেলা সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ থেকে এ রাস্তাটির কিছু কাজ বর্তমানে করা হয়েছে তবে তা কোন উপকারে আসেনি। এখানে মাওয়া পদ্মা রিসোর্ট, পদ্মা নদীর মাঝিসহ একাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ঢাকা যাওয়া সংযোগ রক্ষাকারী অন্যতম এ সড়কটির এই করুণ দশায় দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। রাস্তা খারাপ থাকার কারণে বেড়াতে আসা পর্যটকরা ফিরে যাচ্ছেন। রাস্তায় গাড়ি বিকল হয়ে মৎস্যবাজারের মাছ ও শাকসবজি, পণ্য ও মালামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া এই রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা ছোট বড় ব্যবসায়ীদের ভাগ্য বিড়ম্বনায় কাটছে দিন।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসমিন মৃধা, নুর ইসলাম, স্বপন মন্ডল, মো. নাহিদ জানান, সড়কের এই বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। কেউ এই রাস্তা মেরামতে এগিয়ে আসছে না। রাস্তার বেহাল দশার কারণে মাওয়া চৌরাস্তা থেকে পুরাতন ফেরি ঘাট সঠিক সময়ে আসা-যাওয়া করতে পারছি না। অনেক সময় রাস্তায় গাড়ি পাওয়া যায়না। আবার গাড়ির চালকরা বাধ্য হয়েই কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করেন।
মাওয়া মৎস্যবাজার এলাকার স্থানীয় চিকিৎসক মো. আল মামুন জানান, চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় রোগী দেখতে যেতে হয়। রাস্তার বেহাল দশার কারণে অনেক সময় ইমার্জেন্সি রোগী দেখতে অসুবিধা হয়। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে জনসাধারণের চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়বে। বেহাল এই সড়ক দিয়ে যানবাহনগুলিও প্রতিদিন অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
সিএনজি চালক সানী জানান, ভাঙা রাস্তায় অনেক সময় সিএনজি অকেজো হয়ে যায়। গাড়ির এক্সেল ভেঙে রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়। পাঁচশ টাকা ভাড়ার জন্য গাড়ির ক্ষতি হয় এক হাজার টাকা। অনেক সময় এই রাস্তায় যেতে চাইনা কিন্তু যাত্রীদের অনুরোধে যেতে বাধ্য হই।
ঘুরতে আসা পর্যটক সুমন সেন গুপ্ত জানান, পর্যটন নগরীর রাস্তা-ঘাটের এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুতই এসব রাস্তাঘাট সংস্কার করা না হলে লৌহজংয়ের মাওয়া পর্যটনে ধস নামবে।
এ বিষয়ে মেদেনীমন্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. আশরাফ হোসেন খান বলেন, এই রাস্তাটিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণে অনেকেই আমার কাছে নানা অভিযোগ করেছেন। কিছু কাজ করা হয়েছে, রাস্তায় ইট বিছানো হয়েছে। যা বতর্মানে আরো বেহাল হয়ে পড়ছে। গত মাসিক সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে আমি লৌহজং উপজেলা প্রশাসনের কাছে রাস্তাটি সংস্করণ করতে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। উপজেলা প্রশাসন আমাকে উপজেলা থেকে বরাদ্দ দিবে বলে জানিয়েছে। আশা করি, অতি দ্রুত বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম জানান, আমাদের জেলা পরিষদ থেকে অনেক কাজ করেছি। এই মুহূর্তে ফাইল না দেখে কিছুই বলতে পারবো না। তাছাড়া আমাকে রাস্তাটি দেখতে হবে। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, কাজ যদি অসমাপ্ত থাকে আশা করি পুনরায় দেখে কাজ যথাসম্ভব চালু করা হবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মো. ফাইম রহমান বলেন, আপনি এই রাস্তার বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের এমপি মাহী বি চৌধুরীর সাথে কথা বলেন। আমি কিছু বলতে পারবো না।