নিজস্ব প্রতিবেদক
পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় কুরবানির জন্য ৪ হাজার ৫শত ৬০টির মতো পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু খামারি ও গ্রামাঞ্চলে গৃহস্থ পরিবারগুলো প্রস্তুত করেছে ৫ হাজার ৩শত ৬৬টি পশু। এসব পশু হাটে বিক্রি শুরু হয়েছে। এছাড়া উপজেলার চাহিদা মিটিয়েও আশপাশের জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে নিশ্চিত করেছেন লৌহজং উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
স্থানীয় খামারিরা জানান, ঈদ এগিয়ে আসায় খামারে খামারে গরু-ছাগলের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও বাইরের পাইকাররাও পশু কিনছেন। তবে পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশুর দামে এর প্রভাব পড়েছে। গত বছরের তুলনায় আকারভেদে পশুর দাম ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন কুরবানির বাজার ধরতে খামারি ও গ্রামগঞ্জের গৃহস্থ পরিবারগুলো পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৪ হাজার ৫শত ৬০টির মতো পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু খামারি ও গ্রামাঞ্চলে গৃহস্থ পরিবারগুলো প্রস্তুত করেছে ৫ হাজার ৩শ ৬৬টি পশু। যা চাহিদার চেয়ে ৮শত ৬টি বেশি। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও পশু সরবরাহ করা যাবে।
জানা যায়, লৌহজং উপজেলায় ছোট-বড় নিবন্ধিত গরুর খামার রয়েছে ৭টি এবং ছাগল ও ভেড়ার খামার রয়েছে ৩টি। অনিবন্ধিত গরু ও ছাগলের খামার রয়েছে বিস্তর। এর বাইরেও শহর ও উপজেলার গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থ পরিবারের বাড়িতে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
খামারিরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু ও ছাগল পালন করা হয়েছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু-ছাগল পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। এতে পশুর বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তারা আরো বলেন, যে সংখ্যক দেশি গরু-ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে এগুলো দিয়েই কুরবানির চাহিদা মিটবে। এ অবস্থায় ছোট-বড় খামার টিকিয়ে রাখতে চোরাই পথে যাতে ভারতীয় পশু ঢুকতে না পারে, সেদিকে প্রশাসনের নজর রাখার দাবি জানান তারা।
বৌলতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ চারিগাঁও স্বদেশ খামার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারের লোকজন। পৃথক পৃথক খাটালে দেশি জাতের গরু ও ছাগলের পরিচর্যা করা হচ্ছে। খামারে রোগবালাই মুক্ত করতে স্প্রে করা হচ্ছে কীটনাশক।
এ ফার্মের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক বলেন, আমার খামারে কুরবানির জন্য ২০-২৫টি দেশি প্রজাতির গরু প্রস্তুত করা হয়েছে।
একই ইউনিয়নের ছোট খামারি মোঃ রফিক হাওলাদার বলেন, প্রতিবছরের তুলনায় এ বছর গুরু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরুর দাম বেশি পড়বে।
দাম কী রকম জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার খামারে দেড় লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা দামের গরু আছে। তিনি আরো বলেন, পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। গরুগুলোকে প্রতিদিন দুই বেলা ভুট্টা, খৈল, ব্রান্ড, কাঁচা ঘাস, গমের ভুষি ও খড় খাওয়ানো হয়। গোসল করানো হয় প্রায় প্রতিদিনই। পশুর থাকার জায়গা পরিষ্কার রাখা হয় প্রতিনিয়ত। এছাড়া গরমের কারণে সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে পরিবেশ ঠিক রাখতেও হচ্ছে।
লৌহজং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, গরু ও ছাগলকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারি ও গৃহস্থ পরিবারকে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিটামিন খাওয়াতেও বলা হচ্ছে। তবে গরুকে নিষিদ্ধ কোনো রাসায়নিক ও হরমোন ওষুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে এবং তা মনিটরিং করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রায় সাড়ে চারশ খামারিকে নিরাপদ মাংস উৎপাদনে সচেতনতামূলক সেমিনার, লিফলেট বিতরণ এবং হৃষ্টপুষ্ট করা পশুর খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশেষ বার্তা প্রদান করা হয়।