নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়নের একটি গ্রামের রাস্তাঘাটের নাজুক অবস্থা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে রাস্তার কাজ বন্ধ হওয়ায় জনদূর্ভোগ চরমে। এই যুগে এসেও এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি গ্রামটিতে। ছোট খাটো যে রাস্তাগুলো গ্রামটিতে আছে সেগুলো গ্রামবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া গিয়েছে সামান্য নামমাত্র সহায়তা। গ্রামটিতে প্রায় ৫ হাজার লোকের বসবাস। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা হচ্ছে এই রাস্তাটি। রাস্তাটির এই অবস্থার কারণে এই যুগে এসেও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের টিনে পেঁচিয়ে অথবা লাশের খাটিয়ায় করে নিতে হয় হাসপাতালে। যোগাযোগের এই বেহাল অবস্থার কারণে ইতিপূর্বে অনেকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা অথবা অন্য এলাকায় গিয়ে বসবাস করছেন। দিন দিন গ্রামটি হয়ে উঠছে জনমানবশূন্য। গ্রামবাসীর যাতায়াতের একমাত্র এই রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কিলোমিটার। রাস্তাটি টঙ্গীবাড়ী বালিগাঁও রাস্তার মধ্যবর্তী স্থান বলই থেকে সংযোগ হয়ে বালিগাঁও সুবচনী রাস্তায় শিলিমপুর নামক স্থানে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এই রাস্তাটি দিয়ে গ্রামের লোক ছাড়াও আশপাশের তিনটি গ্রামের লোক ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করতো। ৩ বছর পূর্বে রাস্তাটি উপজেলার অধীনে টেন্ডার পায়। কিন্তু তারপর ঠিকাদার করোনায় মারা গেলে তার স্ত্রী দীর্ঘদিন দেরি করে গত বছর কাজ ধরে রাস্তার এই বেহাল অবস্থা করে কাজ ফেলে চলে যায়। এখন গত ৬ মাস যাবত রাস্তাটি এই অবস্থায় আছে।
এ বিষয়ে আল-আমিন শিকদার জানান, গ্রামের এই রাস্তাটির গত প্রায় তিন বছর পূর্বে উপজেলা থেকে সরকারিভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ চালু হয়েছিল। কিন্তু উক্ত রাস্তার কাজ বর্তমানে অর্ধ পরিত্যাক্ত ও অসমাপ্ত অবস্থায় অব্যাহত আছে। যার ফলে সাধারণ জনগণের গাড়ি তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলার মত অবস্থা নাই। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তাটি দিয়ে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়টি চিন্তা করতেও ভয় হচ্ছে রাস্তার নাজেহাল অবস্থার কারণে। যেই গ্রামে ৮০ দশকে বিদ্যুৎ ছিল অথচ দুর্ভাগ্য এই যে এই গ্রামে বর্তমানে একটি সড়ক যোগাযোগের মূল রেখা নেই। আমরা গ্রামবাসী বর্তমান এই আধুনিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন থাকার পরেও রাস্তার জন্য এক দুর্বিষহ জীবনযাপন করে যাচ্ছি। কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন দ্রুত রাস্তাটির বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের এই দূর্ভোগ থেকে রক্ষা করুন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেজওয়ান ইন্টারন্যাশনালের বর্তমান মালিকের সাথে ফোনে আলাপ করলে তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ ইস্যু ও রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয় মালামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রাস্তার কাজ বন্ধ আছে। আশা করি, সবকিছু ঠিক হলে জানুয়ারী নাগাদ রাস্তার কাজ শুরু করতে পারবো যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সুযোগ দেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন রাজু জানান, রাস্তাটির কাজ রেজওয়ান ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির মালিক করোনাকালীন সময়ে মারা গেলে তার স্ত্রী সেই কাজ সম্পন্ন করার জন্য আবেদন করে। মানবিক দিক বিবেচনা করে কাজটি তাকে দেওয়া হলেও সে রাস্তার কাজটি করতে বিভিন্নভাবে গড়িমসি করে এবং সামান্য কাজ করে দীর্ঘদিন যাবত ফেলে চলে যায়। এমতাবস্থায় আমরা তার টেন্ডার বাতিল করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। রাস্তার কাজ সম্পন্ন করতে দ্রুত পুনরায় টেন্ডার হবে বলে তিনি জানান।
টঙ্গীবাড়ীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে রাস্তার কাজ বন্ধ ; জনদূর্ভোগ চরমে
আগের পোস্ট