নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার-আঁধারার দুটি ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বর্ষারচরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে সাধারণ মানুষের তেমনভাবে কাজে আসছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। চরকেওয়ার ইউনিয়নের মধ্যস্থলে একাধিক নড়বড়ে সেতুর কারণে বর্ষারচরের এ সেতুটি বর্তমানে অর্থহীন হয়ে পড়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সেই হিসেবে নড়বড়ে সেতুগুলো ভেঙ্গে নতুনভাবে বড় আকারে এই পথে আরো সেতু নির্মিত হলে বর্ষারচরে সেতুটি কৃষি ও মৎস্যখাতে নির্ভরশীল অর্থনীতির চাবিকাঠিতে এ জনপদের মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। ভৌগলিকভাবে সড়ক পথে মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে মুন্সীরহাটের পূর্বদিকের চরকেওয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমশুরা যেতে হলে এ পথটি একমাত্র ভরসা হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষের। আর আঁধারা ইউনিয়নের মানুষদের সড়ক পথে এখান দিয়েই যেতে হয়। সেই দিক দিয়ে এ পথটি অনেকভাবেই এ অঞ্চলের মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কিন্তু এই পথে একাধিক সেতু বর্তমানে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। সেগুলো ঠিক করা না হলে এ পথ দিয়ে মাঝারি কিংবা ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এখান দিয়ে বর্তমানে শুধুমাত্র মোটরসাইকেল, মিশুক ও রিক্সা চলাচল করছে এই বিপদজনক সেতুগুলোর ওপর দিয়ে। দক্ষিণ চরমশুরা গ্রামের কুয়েত এলাকায় পিছামারা খালের ওপর রয়েছে এই নড়বড়ে একটি সেতু। এ সেতুটির বর্তমানে রেলিংও ভেঙ্গে গেছে অনেক বছর ধরে। তাছাড়া সেতুটি সরু থাকায় এ সেতুর উপর দিয়ে কোন মাঝারি বা ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এই সেতুর পুল এর পলেস্তার ইতোমধ্যে খসে খসে পড়ে যাচ্ছে। যেকোন সময়ে এখানে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এর একটু দূরে দক্ষিণ চরমশুরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে রয়েছে আরো একটি বড় ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ সেতু। এ সেতুর দুই পাশের রেলিং অনেক আগেই ভেঙ্গে ঝুলে রয়েছে সেতুর দুই প্রান্তে। এই সেতুর পশ্চিমপাশে বসতি গড়ে উঠায় বর্তমানে খালের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে এখানে পুনরায় আর সেতু নির্মাণের প্রয়োজন নেই বলে অনেকেই মনে করছেন। সেই ক্ষেত্রে এখানে এই নড়বড়ে সেতুটি ভেঙ্গে সেখানে মাটি ভরাট করে ওয়ান ওয়ে রাস্তা নির্মাণ করলে এ পথের চলাচলকারী মানুষ উপকৃত হবে। অন্যদিকে আলীরটেক বাজারের পর রেলিং ছাড়া আরো একটি সেতু রয়েছে এ পথে। এ সেতু দিয়ে শুধুমাত্র একটি রিক্সা পারাপার হতে পারে। এ সেতুর প্রস্থতার কারণে রিক্সা ছাড়া আর কোন ধরণের যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এখানেও বড় আকারে আরো একটি সেতু নির্মাণ প্রয়োজন বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। এ পথের তিনটি সেতুর বেহাল দশার কারণে এখানে বড় ধরণের কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণে নবনির্মিত বর্ষারচরের সেতুটি এ পথের মানুষের কোন কাজে আসছে না বলে এখানকার মানুষ মনে করছেন। এ পথের পূর্বপাশে রয়েছে মেঘনা নদী। সেখানে নদীর তীরবর্তী মানুষেরা এ নদী থেকে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ পথের যোগাযোগের এ অবস্থার কারণে এখানকার মাছ ব্যবসায়ীরা শহরে মাছ নিয়ে আসতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনভর মেঘনা নদী থেকে ধরা মাছ তারা স্থানীয় গ্রাম ও বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন কম দামে। এ পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে শহরে এসে মাছ বিক্রি করতে পারলে আরো বেশি দাম পেতো তারা। এদিকে এ দু’টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত। বৃহত্তর আলু অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষক এখানে অর্থকরী ফসল আলু আবাদ করে থাকে। সেই উৎপাদিত আলু তারা এ পথের বিপদজনক সেতুর কারণে মুন্সীগঞ্জ কিংবা দেশের অন্য অঞ্চলে সড়ক পথে নিয়ে যেতে পারে না বলে এখানকার কৃষকরা জানিয়েছে। তাদের উৎপাদিত সেই আলু মেঘনা নদী পথে বাজারজাত করতে হয়। এখানে রবি মৌসুমে অনেক ধরণের সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু তাও এ কারণে কেউ সহজে বাজারজাত করতে পারছে না। এখানকার একাধিক নড়বড়ে সেতুর কারণে মাছ ও উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল মুন্সীগঞ্জের অর্থনীতিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারছেনা বর্তমানে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, নবনির্মিত বর্ষারচরের সেতুটি চরকেওয়ার ইউনিয়নের উত্তর প্রান্তে রয়েছে। চরকেওয়ারের বর্ষারচর পর্যন্ত হচ্ছে এ ইউনিয়নের সীমানা শেষ। আর আঁধারা ইউনিয়নের বালুর মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে এ সেতুর অপর সীমানা। মেঘনা নদীর সংযুক্ত খালের অংশের উপর এ সেতুটি নির্মিত হয়েছে। নব নির্মিত বর্ষারচরের সেতুটি হচ্ছে ৭৫ মিটার। পিসি গার্ডার দিয়ে এ সেতুটি নির্মিত হয়েছে। এ সেতু নির্মাণে সর্বমোট খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৫ টাকা। এরমধ্যে প্রধান সেতুতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৪৯ হাজার ৯১০ টাকা। আর সেতুর দুই প্রান্তের এপ্রোচ সড়ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৮২ টাকা। একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে, চরকেওয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমশুরার পিছামারা খালের ওপর বর্ধিত আকারে ৫০ মিটার নতুন সেতু নির্মিত হবে। আলীরটেক বাজারের পরের সেতুটি অনুরূপ ১০ মিটার নতুন সেতু নির্মিত হবে। এ দু’টি সেতুর প্রস্তাবনা মুন্সীগঞ্জ এলজিইডি অফিস থেকে ঢাকার হেড অফিসে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন আসলেই এখানে কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে শোনা যাচ্ছে। আর দক্ষিণ চরমশুরা কমিউনিটি ক্লিনিকের কাছে সেতুটি ভেঙ্গে সেখানে নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ পথের এগুলো বাস্তবায়ন ঘটলে বর্ষারচরের সেতুটি আরো কার্যকরী হবে বলে এমনটি অভিমত প্রকাশ করেছেন অনেকেই।