নিজস্ব প্রতিবেদক
পুরাতন ঐতিহ্যবাহী জনপদ আদি বিক্রমপুর। বাংলা-বিহার-উড়িশ্যার মাথার তাজ এই বিক্রমপুর। মুন্সীগঞ্জ জেলা হিসেবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছের এলাকা মুন্সীগঞ্জ। তার উপর সংসদীয় আসন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনটি ঢাকার আরো নিকটে। কাজেই, গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন হিসেবে এর আলাদা মর্যাদা আছে, আছে হাজার বছরের ইতিহাস, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান। তবে, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ক্রমেই তার মর্যাদা হারায়। ঐতিহাসিকভাবে সিরাজদিখান উপজেলা কেন্দ্রিক সংসদীয় আসনটি প্রায় এক যুগ আগে পাশের শ্রীনগরের সাথে একীভূত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নৃশংস হত্যাকান্ডের পর এই এলাকায় ব্যক্তি নেতৃত্ব ও আধিপত্যের যে প্রতিযোগিতা ছিলো তা প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। এলাকাকেন্দ্রিক রাজনীতির বাইরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি অত্র এলাকার উন্নয়ন ও প্রতাশিত অগ্রগতি ব্যাহত করে। মূলত আওয়ামী আদর্শের বাইরের রাজনৈতিক বলয়ে নেতৃত্ব চলে আসায় মাটি ও মানুষের সাথে সম্পর্কিত রাজনীতিবিদরা মূল ধারার বাইরে চলে যান। আওয়ামী রাজনীতি ক্রমশ তৃণমূলকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। এমন না যে এই এলাকায় বড় নেতা ছিলেন না, তবে জাতীয় রাজনীতিতে বেশি ব্যস্ত নেতারা নিজ এলাকার কথা ভুলে যেতে বসেন। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকই বলেন বা সাবেক রাষ্ট্রপতি, সবার জাতীয় রাজনীতিকেন্দ্রিক ব্যস্ততায় হারিয়ে যেতে বসে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের জনপদের ভাগ্য ও তার ঐতিহ্যের প্রতি সম্মানপূর্বক উন্নয়ন। তৃণমূলে আওয়ামী রাজনীতির শক্তিশালী প্রবাহ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী ধারার এমপি না থাকার কারণে এ এলাকায় ঐতিহ্যবাহী কর্মকান্ড ও উন্নয়ন ধারা বাধাগ্রস্থ হওয়ায় সার্বিক স্থবিরতা নেমে আসে। ধর্মীয় উগ্রতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় সিরাজদিখান। সংসদীয় আসনের বেশিরভাগ ভোটার হওয়ার পরেও পিছিয়ে পড়তে থাকে সিরাজদিখান।
ব্যবস্যা-বাণিজ্যের প্রাণ হওয়ার পরেও আধুনিক রূপ পায়নি শ্রীনগর। এর মূল কারণ, এই আসনে সাবেক এমপি সুকুমার রঞ্জন ছাড়া মাটি ও মানুষের সাথে সম্পর্কিত নেতৃত্বের অনুপস্থিতি। সাবেক জনপ্রিয় এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ থাকার সময়ে কেন্দ্রের সাথে তৃণমূলের সম্পর্ক বাড়তে থাকলেও তা জাতীয় রাজনীতির কারণে পরবর্তীতে বাধাগ্রস্থ হয়। কেবলমাত্র, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সর্বব্যাপী উন্নয়নের ছোঁয়ায় মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সামনের দিকের চেহারা পাল্টে যায়। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের সাথে তাল মেলাতে পারেনি, শুধুমাত্র এলাকার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দূর্বলতায়। এর উত্তরণে এলাকার মানুষ যেকোনো শর্তে নৌকার প্রার্থী চান। তারা বলছেন, একমাত্র নৌকার প্রার্থীই পারবে এই এলাকার চেহারা পাল্টে দিতে। তারা বলেছেন, আমরা কেমন এমপি চাই? আমি দীর্ঘদিন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মাটি ও মানুষের সাথে মিশেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি তাদের চিন্তা ও ভাবনাকে। করোনা মহামারির সময়ে দেখেছি অসহায় জনগোষ্ঠীকে। অভিভাবকহীন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মানুষ ছিলো এতিমের মতো। দুর্ভাগ্যজনক হলেও, এখনো তাই।
এলাকার জনসাধারণ বলছেন, আমরা এমন এমপি চাই, যিনি বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, মৃত্যুকে মেনে নেবেন, কিন্তু মানুষের হাত ছাড়বেন না। যিনি সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন এলাকায় থাকবেন। দুই-দুইটি উপজেলার সমন্বয়ে তৈরি এই সুবিশাল সংসদীয় আসনের জন্য যোগ্য প্রার্থী দরকার। আমরা চাই, এমন এমপি যিনি এলাকার প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে মতবিনিময় করবেন, শিক্ষকদের উৎসাহিত করবেন, বোঝার চেষ্টা করবেন। ছেলেমেয়েরা কেনো ভালো রেজাল্ট করছে না জানার চেষ্টা করবেন, মাদ্রাসা বা কলেজের যে ছেলেটি বিদেশে কাজের জন্য গেলো, সে কোন ধরনের কারিগরি শিক্ষা পেলো কিনা যা দিয়ে সে বেশি রোজগার করতে পারবে। তিনি চেষ্টা করবেন স্কুল-কলেজ থেকে যেনো শিক্ষার্থীরা ঝরে না পড়ে, তারা যেনো অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাটা সাফল্যের সাথে শেষ করে। তিনি চেষ্টা করবেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেনো দেশ সেরা খেলোয়াড় তৈরি করতে পারে। তিনি সরকারকে দোষ দিবেন না, তিনি এলাকার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিবেন। আমরা চাই আমাদের এমপি গত ৪৮ বছরের মতো বারবার তদবির করার ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে সত্যি সত্যি মানুষের অতীব প্রয়োজনীয় সরকারী হাসপাতালটি এনে দিবেন। সম্মানিত এমপি হিসেবে এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন বা সক্ষমতা দেখাবেন। যদি বিশ্ববিদ্যালয় আনতে না পারেন, তাহলে শ্রীনগর সরকারী কলেজ ও কুচিয়ামোড়া কলেজে অনার্স লেভেলে কোর্স চালু করতে পারেন। বিশেষ করে, সারা বিশ্বের চাহিদার সাথ তাল মিলিয়ে উচ্চমানের নার্সিং ইন্সটিটিউট বাস্তবায়ন করা আজ অতি দরকার এবং তা মুন্সীগঞ্জেই সম্ভব। শ্রীনগর-সিরাজদিখানের উৎপাদিত ফসল সুরক্ষার জন্য সরকারী ব্যবস্থা বাড়ুক, বেসরকারী খাতে হিমঘর তৈরীতে সহজ শর্তে ও এমপির বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা হোক। আমরা চাই শ্রীনগর ও সিরাজদিখান এলাকায় আইটির উপর বিশেষায়িত আইটি ট্রেনিং সেন্টার তৈরি হবে। নদীগুলো খনন করাবেন, অবৈধ মাটি কাটা থেকে নদী বাঁচিয়ে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনকে ভয়াবহ অবস্থা থেকে টেনে তুলে আনবেন। এলাকার আপামর মানুষের, দল-মত নির্বিশেষে সবার এমপি হবেন, আমরা সেরকম এমপি চাই। আমরা চাই এবার আমাদের এমপি নৌকার হোক, যিনি আবার সমগ্র মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী রাজনীতিকে এক সুতায় বাঁধবেন। যিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের নেতৃত্ব ও কর্মীদের মূল্যায়ন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কাজের সাথে সমগ্র এলাকার মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধবেন। যিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপদ আশ্রয় হবেন, যিনি সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করবেন। এই এলাকায় তৃণমূলে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী থাকলেও সবাইকে এক সুতায় গেঁথে আগামী ৫০ বছরের জন্য মুন্সীগঞ্জ-১ আসনকে আওয়ামী লীগের প্রমাণিত ঘাঁটি করা সম্ভব এবং সেটা এখন সবার দাবী।
মাটি ও মানুষের একজন, সবাইকে ভালোবাসার একজন, দূরদর্শী পরিকল্পনার আধুনিক সক্ষম একজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সবাই মুখিয়ে আছে। সবাই তাকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনার দিকে। আমাদের এমন একজন এমপি হবেন, যার সাথে তার এলাকার আর এলাকার মানুষের থাকবে উন্নয়নের সম্পর্ক, শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধের সম্পর্ক, থাকবে ভরসা আর সাহসিকতার সম্পর্ক।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসন নিয়ে আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীমের কিছু কথা
আগের পোস্ট