নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রতিদিনের মত শরীরচর্চার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজের ১০ দিন পর ৬ কিলোমিটার দূরে নাবিস্কো কোম্পানির পরিত্যক্ত একটি বাগান থেকে সেনাবাহিনীতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত জাহিদ হোসেন নামে এক সেনা সদস্যের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের দড়ি বাউশিয়া নামক এলাকায় নাবিস্কো কোম্পানির পরিত্যক্ত একটি বাগান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় জাহিদ হোসেনের (২১) লাশ উদ্ধার করা হয়। সে উপজেলার টেঙ্গারচর ইউনিয়নের টেঙ্গারচর গ্রামের আবুল কালামের পুত্র। জানা যায়, প্রতিদিনের মত গত ৩১শে জানুয়ারী সকাল আনুমানিক ৬টার দিকে শরীরচর্চার জন্য তার নিজ বাসা থেকে বের হয়। ওই দিন থেকে নিখোঁজ হয় জাহিদ। স্থানীয়দের ধারনা, কোন একসময় তাকে হত্যা করে রাতের আঁধারে নাবিস্কো কোম্পানির পরিত্যক্ত এলাকার বাগানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। জাহিদের বাড়ি থেকে ঘটনাস্থলটির দূরত্ব ৬কিলোমিটার। তাই অনেকেই বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চর বাউশিয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন নাবিস্কো কোম্পানির একটি বাগান থেকে গত দুইদিন থেকে দুর্গন্ধ পাচ্ছিল এলাকাবাসী। এদিকে দুর্গন্ধের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকলে গতকাল বুধবার সকালে তার উৎস খুঁজতে গিয়ে বাগানের ভেতর অজ্ঞাত এক যুবকের মৃতদেহ দেখতে পায় এলাকাবাসী। পরে পুলিশে খবর দিলে লাশটি উদ্ধার করে তারা নিয়ে যায়। মরদেহটির শারীরিক গড়নের মিল থাকায় দশদিন ধরে নিখোঁজ সেনা জাহিদ হোসেন (২১) এর পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হলে তারা নিশ্চিত করে লাশটি জাহিদের। নিহত জাহিদ হোসেন (২১) সদ্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি পেয়েছেন। তিনি উপজেলার টেঙ্গারচর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবুল কালামের ছেলের। গত ৪ ফেব্রুয়ারি তার চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল। নিহত জাহিদের বাবা দরিদ্র কৃষক আবুল কালাম বলেন, দুপুর একটার দিকে পুলিশের ফোন পেয়ে তারা থানায় আসেন। লাশটি অর্ধগলিত হওয়ায় প্রথমে লাশের ছবি দেখে তারা শনাক্ত করতে পারেননি। কিন্তু পরবর্তীতে লাশ দেখে এবং তার ছেলের গায়ে থাকা চাদর ও পায়ের জুতা দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন লাশটি জাহিদের। তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। মা মনোয়ারা বেগম বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সেনা সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল জাহিদের। ছেলেকে ঘিরে ছিল তাদের এক বুক স্বপ্ন। সব শেষ হয়ে গেল। জাহিদকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে হত্যাকারীদের অনতিবিলম্বে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারপূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি। গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রইছ উদ্দিন বলেন, পুলিশ একটি লাশ উদ্ধার করেছে। স্বজনরা শনাক্ত করেছে লাশটি টেঙ্গারচর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হওয়া যুবক জাহিদের। লাশটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন এবং লাশটি যেভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তা দেখে প্রাথমিকভাবে বিষয়টি হত্যাকান্ড বলে ধারণা করছেন তারা। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। পুলিশের তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারি ভোরে শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি সেনাবাহিনীতে সদ্য চাকরি পাওয়া জাহিদ হোসেন। এ ঘটনায় নিহত জাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে গত ২ ফেব্রুয়ারি গজারিয়া থানায় একটি ডায়েরি করা হয়।