নিজস্ব প্রতিবেদক
হিজাব না পরায় সপ্তম শ্রেণির ৯ জন স্কুলছাত্রীর চুল কেটে দিয়েছে স্কুলের শিক্ষিকা রুমিয়া সরকার। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ঐ শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।
হিজাব পরে না আসায় ছাত্রীদের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার বিকালে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর আব্দুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ এই নির্দেশনা দেন। এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃপক্ষসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছেন।
ছাত্রী মাইসা জাহান ও যমুনা আক্তার কেঁদে কেঁদে বলে, আমাদেরসহ ১০/১১ জনের চুল কেটে নিলেন বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ের শিক্ষিকা রুমিয়া সরকার।
যাদের চুল কেটেছে তারা হলো- সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মাইসা জাহান, তানজিলা আক্তার, আনীলা আক্তার, তাসফিয়া, মাহাদিয়া, সুমাইয়া ও ইফাসহ ৯ জন। হিজাব পরে না আসার কারণে তাদের চুল কেটে নেয়া হয় বলে তারা জানায়।
মাইসা জাহান জানায়, আমার একটাই হিজাব। ঐ হিজাবটা ময়লা হয়ে গেছে, তাই ধুয়ে দিয়েছি। এজন্য স্কুলে পরে যেতে পারিনি। ম্যাডামকে অনেক অনুরোধ করে বললাম, তারপরও রক্ষা পাইনি। ম্যাডাম আমাদের চুল কেটে দিল। তাই আমি আর স্কুলে যাব না।
মাইসা জাহান ও তানজিলা আক্তারের বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুরে, আনীলা আক্তার ও তাসফিয়ার বাড়ি একই উপজেলার মোহাম্মদপুরে, মাহাদিয়া ও সুমাইয়ার বাড়ি মধুপুরে, ইফার বাড়ী বাড়ৈখোলা গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
মাইসা জাহানের পিতা কহিনুর মিয়া বলেন, আমার মেয়ে অন্যায় করেছে বললেই হত, আমরা শাসন করতাম। তাকে চুল কেটে ন্যাড়া বানিয়ে দিল। এটা কি কোন অন্যায় নয়? তাই আমার মেয়েটা ভেঙ্গে পড়েছে ও আর স্কুলে যেতে চাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ স্কুলের এক শিক্ষক জানান, বর্তমান সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ গোলাম হোসেন সভাপতি হওয়ার পর ছেলেমেয়েদের ড্রেসকোড চেঞ্জ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি শিক্ষকদের খুব চাপে রাখেন। এ বিষয়ে যেকোন এ্যাকশন তিনি নিতে বলেছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা রুমিয়া সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করা যায়নি। অনেক চেষ্টার পর মোবাইলে রিং বাজলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সৈয়দপুর আব্দুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিয়া মোঃ ফরিদ বলেন, ক্লাসেই কেচি ছিল তাই হাতের কাছে পেয়ে এ কাজ করে ফেলেছে। তবে ঘটনাটি অন্যায় ও দুঃখজনক।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা ঘটনাটি জেনেছি। ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করেছি। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তারপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হিজাব না পরায় ৯ ছাত্রীর চুল কেটে দেওয়ায় শিক্ষিকা বরখাস্ত
আগের পোস্ট